ঈদগাহ মাঠটি এখন কাঁচাবাজার

‘আমরা তো এই মাঠেই খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। পরে স্থানীয় সবার চাওয়ায় এখানে ঈদগাহ হয়। অথচ, মাঠটি দখল করে নিয়ে কাঁচাবাজার বসিয়েছে। শিশুরা আর খেলতেও পারে না, এখানে হয়তো আর কখনো ঈদের নামাজও পড়া হবে না।’
ঈদগাহ মাঠটির প্রায় পুরোটা জুড়েই এখন কাঁচাবাজার। ছবি: মো. আব্বাস/স্টার

আব্দুল হক বড় হয়েছেন মিরপুর-৬ এর ডি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে। ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি এই এলাকার বাসিন্দা।

তার বাড়ি সংলগ্ন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের পাশে ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়ার স্মৃতি তার মনে এখনো জ্বলজ্বল করছে। প্রতিদিন বিকেলে এই মাঠ আশপাশের সব শিশুদের খেলার মাঠে পরিণত হতো।

তবে তার ছয় বছরের ছেলে বাবার মতো এই মাঠে আর খেলতে বা ঈদের নামাজ পড়তে পারে না।

আব্দুল হক বলেন, 'আমার ছেলেও খোলা মাঠে খেলতে চায়। কিন্তু ঈদগাহ মাঠটি প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। সেখানে তারা কাঁচাবাজার বসিয়েছে। এই এলাকায় আর কোনো মাঠ বা খেলার মাঠও নেই।'

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, 'মাঠটিতে শিশুরা বিকেলে খেলাধুলা করতো। 'আমরা তো এই মাঠেই খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। পরে স্থানীয় সবার চাওয়ায় এখানে ঈদগাহ হয়। অথচ, মাঠটি দখল করে নিয়ে কাঁচাবাজার বসিয়েছে। শিশুরা আর খেলতেও পারে না, এখানে হয়তো আর কখনো ঈদের নামাজও পড়া হবে না।'

ওই এলাকার আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দাও একই কথা বলেছেন।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এই ঈদগাহ মাঠের ৪০ কাঠা জমির মালিক।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাহ মাঠের বেশিরভাগ অংশে বসানো হয়েছে কাঁচাবাজার।

ঈদগাহ মাঠের মূলগেটটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেখানে লেখা 'ঈদগাহ মাঠ' কথাটি প্রায় বিবর্ণ।

মাঠে প্রবেশের মূলগেট, যেখানে ‘ঈদগাহ মাঠ’ কথাটি প্রায় বিবর্ণ হয়ে গেছে। ছবি: মো. আব্বাস/স্টার

এখানে টিনশেডের প্রায় ২০০ দোকানে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মাছ, মুরগি, মাংস এবং মুদি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এখানে পাইকারি মাছের বেচাকেনাও চলে। পাশাপাশি মাছ সংরক্ষণের জন্য রয়েছে বরফকল।

মাঠের একটি ছোট অংশ এখনো খালি রয়েছে। সেখানে ঈদের নামাজের ইমামের জন্য একটি মিম্বার বানানো রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মসজিদ সংলগ্ন দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার অধীনে একটি এতিমখানার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য মসজিদ কমিটি সেখানে কাঁচাবাজার বসিয়েছে।

দোকান মালিকরা জানান, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বেপারী দোকানের জায়গা বরাদ্দের জন্য ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন।

এ ছাড়া, প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন মসজিদ কমিটিকে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা দিতে হয়। আর প্রায় ৩০ জন পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীর প্রত্যেককে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, তারা এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে পুলিশ কমিশনার, মেয়র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ট্রাফিক পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

তারা স্থানীয় শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে কাঁচাবাজারটি উচ্ছেদ করে খেলার মাঠটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

তারপরও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে গিয়াস উদ্দিন বেপারী জানান, সম্প্রতি তিনি মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।

ঈদগাহ মাঠটিকে কাঁচাবাজার বানানোর জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, এতিমখানা পরিচালনার জন্য মাঠটিতে অনেক আগেই কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমি যতদূর জানি, আগের কমিটির কেউ এর জন্য অনুমতি নেয়নি।'

কেন তারা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আপনারা সবাই জানেন যে কীভাবে এখানে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে।'

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা বিভাগ-১, মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ার্দ্দার তাবেদুন নবী জানান, তারা কাউকে ওই জমি ইজারা দেননি, এমনকি মসজিদ কমিটিও তাদের কাছ থেকে ঈদগাহ মাঠের জমিতে কাঁচাবাজার বসানোর অনুমতি নেয়নি।

তিনি বলেন, 'আমরা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ওই মাঠ থেকে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করতে দুটি চিঠি দিয়েছি।'

'যদি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান উচ্ছেদের অনুমতি দেন, তাহলে তা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক এ কাজে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দিলে আমরা উচ্ছেদ অভিযানে যাব।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

12h ago