ঈদে বাড়িফেরা

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রুটে অতিরিক্ত ভাড়া ও দীর্ঘ অপেক্ষা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে তোলা। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

সরকারি ছুটির পাশাপাশি পোশাক কারখানাগুলোতেও ছুটি শুরু হয়েছে আজ। এতে গত দুদিনের তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেড়েছে ঘরমুখো যাত্রী ও পরিবহনের চাপ। তবে, মহাসড়কে যানজট না থাকলেও ঢাকার ভেতরে যানজট থাকায় দীর্ঘসময় বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাছাড়া, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল বাসস্ট্যান্ডে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্তত ১৬টি জেলার মানুষ যাতায়াত করেন। দুই মহাসড়কের বড় একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে গেছে। জীবিকার কারণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আশেপাশে বসবাস করা লোকজন সাধারণত সাইনবোর্ড ও শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে সুবিধাজনক পরিবহনে যাতায়াত করে থাকেন।

সাইনবোর্ড মোড়ে ব্যাগ হাতে অপেক্ষা করছিলেন পোশাক শ্রমিক আলী আহাম্মদ ও তার পরিবারের চার সদস্য। আলী নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সোমবার অর্ধবেলা কারখানায় কাজ করার পর ছুটি পেয়েছেন। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যাবেন। 

আলী আহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বোন-ভাতিজিকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। ঈদে গ্রামে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কাঁটাতেই সবার ভালো লাগে। কিন্তু বাসগুলো ভাড়া চাচ্ছে বেশি। অন্য সময় ৮০ টাকা ভাড়া লাগলেও এখন চাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সে কারণে অন্য পরিবহন খুঁজছি।'

পাগলা নন্দলালপুর এলাকায় একটি কাপড় তৈরির কারখানায় চাকরি করেন মো. মানিক। তার বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। স্ত্রী ও সন্তানকে তিনদিন আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঈদের ছুটি পেয়ে আজ রওনা হয়েছেন তিনি। ২৫০ টাকায় জৈনপুর পরিবহনের একটি টিকেট কিনেছেন, যা স্বাভাবিক সময়ে ১৬০ টাকা ছিল বলে জানান মানিক।

তিনি বলেন, 'শেষ সময়ে ঝামেলা হবে ভেবে ফ্যামিলি আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। ঈদে তো ৫০-১০০ টাকা ভাড়া বেশি নেবেই। এইটা তো সবসময়ের ঘটনা। কিন্তু বাসও আসছে না। দুপুর ১টায় এসেছি, এখন ৩টা বাজে তাও বাস আসেনি।'

জানতে চাইলে ইকোনো সার্ভিস পরিবহনের টিকেট সেলসম্যান ফয়সাল আহমেদ বলেন, ঢাকার ভেতরের সড়কগুলোকে যানজট থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে বাস আসতে পারছে না।

'সায়েদাবাদ থেকে আমাদের বাস ছাড়ে। কিন্তু জ্যামের কারণে সায়েদাবাদ, শনির আখড়া পার হয়ে আসতে আসতে সময় লাগে অনেক। অনলাইনে আমাদের বাস সাইনবোর্ড কাউন্টারে আসতে সাড়ে ৩টা সময় দেখাচ্ছে কিন্তু জ্যামের কারণে তা ৫টাও বাজতে পারে। জ্যাম হলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। কিন্তু এটা তো যাত্রীরা বোঝে না।', বলেন তিনি।

সোহাগ পরিবহনের টিকেট কিনে আধ ঘণ্টা ধরে কাউন্টারের সামনে রোদের মধ্যে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করছেন ডেমরার ডগাইরের ব্যবসায়ী মো. শাহানউদ্দিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী এ যাত্রী বলেন, 'কাউন্টার থেকে বলছে, আরও দেড় ঘণ্টা লাগবে৷। রাস্তায় নাকি অনেক জ্যাম।'

এদিকে, ঈদ উপলক্ষে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার যাত্রী কম পাচ্ছেন বলে জানান কিশোরগঞ্জগামী শাহ সুলতান পরিবহনের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, 'এইবার ১১ দিনের লম্বা ছুটি হওয়ায় সমস্যায় পড়ছি আমরা। ঈদের আগে যাত্রী দেখতেছি না। অনেকেই ভেঙে ভেঙে আগেই চলে গেছে। এই আধ ঘণ্টায় যাত্রী উঠেছে মাত্র তিনটা। চট্টগ্রাম-কুমিল্লার দিকের যাত্রী বেশি।'

তবে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে বলে জানান ফেনী-কুমিল্লাগামী মুজিব এন্টারপ্রাইজ নামে পরিবহনের সুপারভাইজার ফারুক হোসেন।

'গত দুদিন যাত্রী খুব কম ছিল। লোকজন ছুটি পাওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যা থেকে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। আশা রাখি, আজকে সন্ধ্যার পর থেকে আরো বাড়বে', বলেন ফারুক৷

এবার ঈদের আগে মহাসড়কগুলোর সংস্কারকাজ সম্পন্ন করায় যাত্রায় ভোগান্তি কম বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। দুই মহাসড়কে গত তিনদিন ধরে যানজটে পড়তে হচ্ছে না। তবে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদী ও ভৈরবের পরে সড়ক ভাঙা থাকায় চলাচলে সমস্যা পোহাতে হয় বলে জানান তারা।

এদিকে, সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও মহাসড়কে এলোপাথারিভাবে বাস রেখে যাত্রী তুলতে দেখে গেছে।

শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. শরফুদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহাসড়কে অতিরিক্ত কোনো চাপ নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন আছে। কিছু পরিহহন কাউন্টারের সামনে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছে। কিন্তু তাদের অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী তুলে সড়ক ছেড়ে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে যাত্রী পরিবহনে শৃঙ্খলায় শেষমুহুর্ত পর্যন্ত কাজ করবে পুলিশ।'

Comments