ঈদ যাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে এবারও যানজটের আশঙ্কা

টাঙ্গাইল মহাসড়ক
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে সংযোগ সড়কে এলেঙ্গার কাছে ১৩ কিলোমিটার চার লেনের কাজের সাড়ে ৩০০ মিটারের কাজ ঈদের আগে শেষ করার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

আসন্ন ঈদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরের মানুষের ঘরে ফেরা নির্বিঘ্ন করতে নানান উদ্যোগের কথা চিন্তা করা হলেও প্রতিবছরের মতো এবারও সেতুর সরু সংযোগ সড়কে বিশেষ করে পূর্ব প্রান্তে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল মহাসড়কে উঠার আগে সাধারণত সাভার, নবীনগর ও চন্দ্রায় যানজট হয়। চন্দ্রা থেকে গাড়িগুলো সহজেই এলেঙ্গা পর্যন্ত চলে আসতে পারে। এরপর রাস্তা সরু থাকায় ও সেখানে চার লেনের কাজ চলায় গাড়ি চলাচল ধীর হয়ে যায়।

এই ধীর চলাচল তীব্র যানজটের রূপ নেয় যখন গাড়িগুলো এক এক করে টোল দিয়ে সেতু পার হতে যায়। তখন গাড়ির পেছনে গাড়ি থেমে থাকে।

শুধু তাই নয়, ঈদের এই ব্যস্ততায় অনেক ফিটনেসহীন গাড়ি রাস্তায় নামে বলে সেগুলোর কোনো একটি চলার পথে নষ্ট হয়ে গেলে এর প্রভাবে অন্য গাড়ির চলাচল ধীর বা বন্ধ হয়ে যায়।

পরিবহন শ্রমিকদের ভাষ্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থাই নেন না কেন, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে যানজট হতে পারে। প্রতিদিন অতিরিক্ত হাজারো গাড়ি টোল দিয়ে সেতু পার হবে, তাই যানজট এড়ানোর সুযোগ নেই।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচটিসহ মোট ২৬ জেলার ১১৬টি রুটের যানবাহন চলাচল করে।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদের আগে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে মহাসড়কে যানজটের কারণে প্রতিবছর ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

জানা গেছে, উত্তরের পথে ঈদের ছুটিতে রাজধানী থেকে অনেক গাড়ি এক সঙ্গে বের হয় বলে আশুলিয়া, বাইপাইল, সাভার ও চন্দ্রায় যানজট হয়। তবে চন্দ্রার পর টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৬০/৬৫ কিলোমিটার দ্রুত গাড়ি চলে আসতে পারে।

টাঙ্গাইল মহাসড়ক
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে সংযোগ সড়কে এলেঙ্গার কাছে চার লেনের কাজে ধীর গতির কারণে এবারো ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

তবে চার লেনে দ্রুতগতিতে এসে এলেঙ্গা থেকে দুই লেনের ১৩ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব সংযোগ সড়কে আসার পর গাড়ির গতি কমে যায়। এরপর টোল বুথে টোল দিতে দিতে গাড়ির লম্বা সারি তৈরি হয়ে যায় বলে জানান তারা।

গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব সংযোগ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, এলেঙ্গার পর কয়েক শ মিটার অংশে চার লেন রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবুল মোমেন লিমিটেডের এলেঙ্গা থেকে সেতুর পূর্ব অংশের চার লেন কাজের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের আগেই এই অংশের কাজ শেষ করা হবে।'

ঢাকা-রংপুর রুটের বাস ড্রাইভার সাইফুল ইসলাম মনে করেন, 'মাত্র এই কয়েক শ মিটার নয় বরং পুরো সংযোগ সড়কটি চার লেন হলেও ঈদের আগের পরিস্থিতির হেরফের হবে না। কারণ সেতুতে টোল দিতে গাড়ি দাঁড় করাতেই হবে।'

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তা ওয়ান ওয়ে ও উত্তর থেকে ঢাকামুখী গাড়িগুলো সেতু পার হওয়ার পর পুরাতন ভূঞাপুর সড়ক দিয়ে বাইপাস করে দেওয়া হতে পারে।'

ঢাকা-পাবনা রুটের বাস চালক মামুন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যানজট কমাতে গত বছরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিন্তু লাভ হয়নি। সরু ভূঞাপুর রোডে যানজট হওয়ায় গাড়ির শিডিউল বিপর্যয় হয়েছিল। যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছিল।'

টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'এক সঙ্গে এতো গাড়ি রাস্তায় নামলে সমস্যা তো হবেই। অতিরিক্ত গাড়ির চাপের পাশাপাশি ফিটনেসহীন গাড়ি ও বেপরোয়া গাড়ি চালনোও বড় সমস্যা।'

টাঙ্গাইল মহাসড়ক
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে সংযোগ সড়কে এলেঙ্গার কাছে রাস্তা দুই লেন হওয়ায় মূলত সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

'কোন গাড়ি যদি নষ্ট বা দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে রাস্তা সরু হওয়ার কারণে অন্য গাড়িগুলো সেটিকে ওভারটেক করতে পারে না। গাড়িটি রেকার দিয়ে সরাতে সময় লেগে যায়। এর মধ্যে গাড়ির লম্বা লাইন সৃষ্টি হয়।'

তিনি মনে করেন, ঈদের সময় যেহেতু ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ফিটনেস চেক করা যায় না, গাড়ির মালিকদের উচিত তাদের গাড়ির কাজ এখনই সারিয়ে নেওয়া। ঈদে মহাসড়কে ফিটনেসহীন গাড়ি না নামানো। অপরদিকে, একই দিন এক সঙ্গে বের না হয়ে ভেঙে ভেঙে বা যাদের পক্ষে সম্ভব আগেভাগেই বাড়ি চলে আসা যেতে পারে।

'পূর্বপাড়ে যানজট হলে ঢাকামুখী গাড়ি থামিয়ে রেখে সেতুর উভয় লেন দিয়ে ঘরে ফেরা মানুষদের বহনকারী গাড়িগুলো পার করানো হতে পারে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সড়ক ও সেতুসচিব ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবারের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল বুথের সংখ্যা বাড়ানো, মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোলবুথ করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।'

ঈদে সাধারণ মানুষের ঘরে ফেরা নির্বিঘ্ন করতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাস্তায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ বুধবার টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন।

এ দিকে, সিরাজগঞ্জ অংশে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের দুরবস্থার কারণে বিগত বছরগুলোয় যানজট হলেও এবার রাস্তার অবস্থা বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, ঈদে উত্তরের ঘরে ফেরা মানুষের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই মহাসড়কের সর্বশেষ চিত্র পর্যবেক্ষণ করে যে সব জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

'এ বছর মহাসড়কের অবস্থা ভালো' উল্লেখ করে সড়ক কর্তৃপক্ষ ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, 'যে সব জায়গায় ছোটখাটো কাজ বাকি আছে সেগুলো আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হবে। এ ছাড়া মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রায় সাড়ে সাত শ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।'

গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদে মানুষ নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশা করেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার।

Comments

The Daily Star  | English

New Hampshire hamlet tied in first US Election day votes

Kamala Harris and Donald Trump each got three ballots in the tiny community in the northeastern state of New Hampshire

10m ago