ছাত্রলীগ নেতার হামলায় ৪ সাংবাদিক আহত: দোষীদের শাস্তি দাবি বিএফইউজে-ডিইউজের

আহত চার সাংবাদিক। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ও তার ক্যাডার বাহিনীর হামলায় চার সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ডিউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম আজ রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন এখন সরকারি দল, লুটেরা গোষ্ঠী ও প্রভাবশালী মহলের নিত্যদিনের কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন সাংবাদিক নির্যাতনের খবর চোখে পড়ে। এর কোনো প্রতিকার নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সাংবাদিক নির্যাতন দিনকে দিন বাড়ছে বলে আমরা মনে করি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকারের গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছেন অসংখ্য সাংবাদিক। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন হয়েছে একযুগ আগে। এখনো বিচার হয়নি। অবিশ্বাস্যভাবে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১০৮ বারের মতো পেছানো হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এমন ব্যর্থতা ওই সংস্থার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে সাংবাদিক হত্যার বিচারে সরকার আন্তরিক কি না, এ বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, একদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা-বিরোধী কালাকানুন করে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, অন্যদিকে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে গণমাধ্যম অস্তিত্বের সংকটে পড়বে, জুলুম-দুর্নীতি দিন দিন বাড়বে। আমরা সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গতকাল জয়পুরহাটের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমি দখল চেষ্টার সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ও তার ক্যাডার বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন চার সাংবাদিক। ওইদিন বিকেলে পাঁচবিবি উপজেলার ফিচকাঘাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত সাংবাদিকরা হলেন—মাছরাঙা টেলিভিশনের জেলা সংবাদদাতা আল মামুন, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের জেলা প্রতিনিধি জুয়েল শেখ, বাংলার দূতের জেলা প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক ও সংবাদ সারাবেলার পাঁচবিবি প্রতিনিধি বাবুল হোসেন।

এ ঘটনায় শনিবার রাত ১০টার দিকে মহীপুর হাজী মহসীন সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলামসহ নয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন সাংবাদিক জুয়েল শেখ। এরপর থেকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে তাকে নানানভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।

আহত সাংবাদিকরা জানান, উপজেলার পিরপাল গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য কৈলাশ মাহাতোর সঙ্গে রায়হান চৌধুরী নামে এক প্রভাবশালীর জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিষয়ে মামলা হলে আদালত ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তিতে কোনো পক্ষই প্রবেশ করতে পারবেন না বলে আদেশ দেন। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার বিকেলে রায়হান চৌধুরীর পক্ষে সেই জমি দখলে নিতে ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করেন। মাহাতো জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চার সাংবাদিক। সেসময় ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল ও তার ক্যাডার বাহিনী অতর্কিতভাবে সাংবাদিকদের লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকরা তাদের উদ্ধার করে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন। এরপর তাদের জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago