টিকিট চেককে কেন্দ্র করে আরএনবির ২ সদস্যকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ র‍্যাবের বিরুদ্ধে

নাটোর রেলস্টেশন। ছবি: স্টার

নাটোর রেলস্টেশনে টিকিট চেক করাকে কেন্দ্র করে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও র‍্যাবের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, আটকে রাখা ও আরএনবির দুই সদস্যকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনা পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ঘটনার শুরু গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দ্রুতযান এক্সপ্রেসের ট্রেনের যাত্রী সাদা পোশাকে থাকা র‌্যাব সদস্য মো. আল মামুনের কাছে আরএনবি সদস্যরা টিকিট দেখতে চাইলে। আরএনবি জানায় এতে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং আরএনবির এক সদস্যকে ধাক্কাধাক্কি করেন।

কর্পোরাল মো. আল মামুন রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোম্পানিতে (সিপিসি-১) কর্মরত।

নাটোর আরএনবি ইনচার্জ মো. মোতালেব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সাদা পোশাকের র‌্যাব সদস্যের কাছে টিকিট দেখতে চান আরএনবি সদস্যরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আরএনবি সদস্যকে ধাক্কা দেন ওই যাত্রী। এরপর আরএনবি সদস্যরা তাকে টিসি রুমে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে নাটোর র‌্যাব অফিস (সিপিসি-২) থেকে প্রায় ১৫ জন পোশাক পড়া সশস্ত্র র‌্যাব সদস্য এসে মীমাংসার কথা বলে আরএনবি সিপাহি মো. মোক্তার হোসেন এবং অপর আরএনবি সিপাহি মো. জিয়াউর রহমানকে তুলে নিয়ে যান। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (পাকশী) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, আরএসবি সদস্যরা যাত্রীর (র‌্যাব সদস্য) টিকিট দেখতে চাইলে তিনি তাদেরকে মারধর করেন। পরে ওই যাত্রীকে টিসি রুমে নিয়ে গেলে নাটোর র‍্যাব অফিস থেকে পোশাকপড়া র‌্যাব সদস্যরা এসে ডিউটিরত অবস্থায় দুই জন আরএনবি সদস্যকে প্রভাব খাটিয়ে তাদের (র‌্যাব) অফিসে তুলে নিয়ে যান। তারপর সেখানে নিয়ে গিয়ে চোখে কালো কাপড় পেঁচিয়ে প্রচন্ড মারধর করেন। আহত অবস্থায় তাদের নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সান্তাহার জিআরপি থানায় নিয়ে যায় এবং অভিযোগ জমা দেয়।

তিনি বলেন, 'ডিউটিরত অবস্থায় দুই জন সরকারী কর্মচারী আরএনবি সদস্যকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন র‌্যাব সদস্যরা। রেলের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এভাবে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই অন্যায়ের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দায়িত্ব পালনকালে ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় কেউ যদি তাদের দাপটে কাউকে তুলে নিয়ে যায় তাহলে সেটা দেশে এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির অবতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ঘটনা দেশের দুটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মুখোমুখি নিয়ে আসার মতো বিষয়। র‌্যাবের দায়িত্বশীলরা বিষয়টা আমাদের জানিয় শুরুতেই নিষ্পত্তি করতে পারত। তারা কতটা দায়িত্ব পালন করেছে সেটাও আমাদের জানা নেই।'

তিনি আরও বলেন, আরএনবি সদস্যরা কোনো অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিল।

জানতে চাইলে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একজন ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে দুই জন আরএনবি সদস্য একটা রুমে আটকিয়ে মারধর করে। ওই ভুক্তভোগী একজন র‌্যাব সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রের। ওই ভুক্তভোগী মামলা করবেন এবং তার ব্যক্তিগত প্রতিকারের জন্য ওই দুই জনকে র‌্যাবের টহল টিম গিয়ে নিয়ে এসেছে।'

আরএনবি সদস্যদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আরএনবি সদস্যরাই আমাদের একজন সদস্য 'যাত্রী'কে মারধর করেছে। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে, মাথায় আঘাত করেছে। রুমে নিয়ে গিয়ে বেল্ট খুলে মারধর করেছে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।'

'তারা (আরএনবি সদস্যরা) যে এসব করেছে তারা ঊর্ধ্বতনদের কাউকে কিছুই জানায়নি। দেড় ঘণ্টার মতো তাকে আটকে রেখেছে। কোথাও ফোনও করতে দেয়নি। এসব বিষয়ে রেলের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে।

'এখানে র‌্যাবের কোনো বিষয় নাই, একজন ব্যক্তি ভুক্তভোগী, ব্যক্তি মামলা করবে। সেই ব্যক্তির প্রতিকারের জন্যই আমরা কাজ করছি।'

সান্তাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, র‌্যাবের সদস্যরা রাতে দুই জন আরএনবি সদস্যকে সান্তাহার থানায় জমা দিয়েছেন এবং কর্পোরাল আল মামুন লিখিত অভিযোগ করেছেন। যেহেতু দুইটি বাহিনীর বিষয় সে কারণে বিষয়টি রেল পুলিশের সর্বোচ্চ মহলে থেকে যেমন সিদ্ধান্ত আসবে তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (রেলওয়ে) দেবদাস ভট্টাচার্য্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি দুটি বাহিনীর বিষয় সেকারণে তদন্ত করে কার কতটুকু দোষ সেসবের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago