পণ্য পেয়ে খুশি, দীর্ঘ অপেক্ষায় বিরক্ত
'ভোর সাড়ে ৬টায় আইসা পড়সি, যাতে লাইনে দাঁড়ানোর সিরিয়াল আগে পাই। সিরিয়াল আগে না পাইলে যদি মাংস, দুধ, ডিম শেষ হইয়া যায়। গাড়ি এখানে আসছেই ১১টার দিকে। ১১টার পর এক ডজন ডিম, এক কেজি গরুর মাংস ও দুই লিটার দুধ কিনতে পারছি।'
আজ বুধবার রাজধানীর খামারবাড়ি মোড় এলাকায় দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলছিলেন ফার্মগেটের বাসিন্দা গৃহিণী মরিয়ম।
রমজান উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সেখানে সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস, খাসির মাংস, ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির মাংস, দুধ ও ডিম। আজ ছিল এই বিক্রির চতুর্থ দিন।
সরেজমিনে সকাল পৌনে ১০টায় খামারবাড়ি মোড়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৩৫ জনেরও বেশি মানুষ অপেক্ষা করছেন মাংস, দুধ ও ডিমের গাড়ির জন্য। সকাল ১০টায় গাড়ি আসার কথা থাকলেও গাড়ি পৌঁছায় ১১টার দিকে। গাড়ি দেরিতে আসায় ভোর থেকে অপেক্ষমাণ ক্রেতাদের ভেতর বাড়তে থাকে ক্ষোভ।
সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে দেখা যায় এই পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্যাথলজি অনুবিভাগের পরিচালক ডা. মো. জসিম উদ্দিনকে। ভোর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন গিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানান ওই কর্মকর্তাকেও।
সাড়ে ১০টার দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যবয়সী একজন বললেন, 'সাড়ে ৮টায় এখানে এসেছি। সাড়ে ১০টা বাজে। এখনো গাড়ি আসে নাই। অথচ ১০টায় আসার কথা ছিল। রোজা রেখে এই রোদের মধ্যে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যারা এই লাইনে এসে দাঁড়াবে, তারা তো সারাদিনে আর কোনো কাজ করতে পারবে না।'
'আমিও সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়াইছি। আমার ছোট বাচ্চাটাকে বাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোনের কাছে রাইখা আসছি। কতক্ষণ দাঁড়ায়ে থাকতে হইব, তাও বুঝতাছি না। ২০০ টাকা বাঁচাইতে আইসা লাভ হইতেছে কী, বুঝতেছি না', বলেন গ্রিনরোডের বাসিন্দা গৃহিণী খাদিজা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই মোড়ে যেহেতু ছায়াযুক্ত স্থান নেই, তাই রোদের মধ্যে যারা সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের কষ্ট হচ্ছে। যারা বিষয়টির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আছেন তাদের বলেছিলাম, যাতে আরও আগে গাড়ি পাঠানো হয়। তারপরও দেরি হলো। রোজা রেখে এই রোদের মধ্যে অপেক্ষা করায় মানুষের যন্ত্রণা হলো। কাল থেকে যাতে সঠিক সময়ে গাড়ি আসে, সেই চেষ্টা করব।'
তিনি জানান, আজ এই পয়েন্টে ফ্রিজিং গাড়িতে মোট ৩৫০ লিটার দুধ, ২৩৭ কেজি গরুর মাংস, ২০ কেজি খাসির মাংস, ১৮০ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির মাংস ও তিন হাজার ৯০০ পিস ডিম আনা হয়েছে।
জনপ্রতি এক কেজি গরুর মাংস, এক কেজি খাসির মাংস, দুই কেজি মুরগির মাংস, দুই লিটার দুধ ও এক ডজন ডিম বিক্রি করা হবে।
গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার ২৫০ টাকা, দুধ লিটারপ্রতি ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকা।
সকাল সাড়ে ১১টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪০ জনেরও বেশি ক্রেতা, যাদের মধ্যে নারী ছিলেন ১২ জনেরও বেশি। সেই সময় লাইনে এসে দাঁড়াতে দেখা গেল ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা গৃহিণী আফিয়াকে।
ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'অন্য একটা কাজ সেরে এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। এখানে মাংস, দুধ, ডিমের গাড়ি দেখে থামলাম। দেখলাম দাম বাজারের চেয়ে কম। আমরা যেহেতু মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ, তাই লাইনে দাঁড়ালাম এগুলো কেনার জন্য।'
সকাল সাড়ে ৭টায় খামারবাড়ি এসে সাড়ে ১১টায় এক ডজন ডিম, দুই লিটার দুধ, এক কেজি মুরগির মাংস ও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পেরেছেন মগবাজারের বাসিন্দা মো. শওকত।
কিন্তু এতসময় লাইনে দাঁড়ানোয় নিজের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানান খুচরা এই সবজি বিক্রেতা। বলেন, 'এখানে লাইন ধরতে গিয়া আমার সবজির দোকান বন্ধ রাখতে হইসে।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, গাড়ি আসার দেড় থেকে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব পণ্যই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
অপেক্ষার ভোগান্তি নতুন বাজারেও
খামারবাড়ির মতো অপেক্ষায় ভোগান্তির একই চিত্র দেখা গেছে নতুনবাজারের বাঁশতলা এলাকার পয়েন্টেও।
সরেজমিনে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে দেখা যায়, যাত্রী ছাউনির নিচে ২০-৩০ জন নারী-পুরুষ অপেক্ষা করছেন। জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানের অপেক্ষায় আছেন।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর সকাল ১১টায় রামপুরা সড়ক ধরে একটি ফ্রিজিং ভ্যান আসতে দেখা যায়। অপেক্ষমাণ মানুষেরা তড়িঘড়ি করে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। ১১টা ১০ মিনিটের দিকে শুরু হয় বিক্রি।
দুই হাতে ছোট দুই শিশুকে ধরে সেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নতুনবাজার এলাকার গৃহিণী জোনাকি বেগম। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'গাড়ি আসার টাইম ঠিক নাই। সাড়ে ৯টার দিকে একবার এসে ঘুরে গেছি। বাচ্চারা বাসায় একাই ছিল। পরে ওদের নিয়ে এসেই আবার লাইনে দাঁড়াই।'
'আমরা গরিব মানুষ। বাজার থেকে দুধ, ডিম ও মাংস কিনে খাওয়ার উপায় নাই। শিশুদের নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো কষ্টকর, তারপরও কম দামে এসব পাওয়ার আশায় এখানে এসেছি', বলেন তিনি।
পৌনে ১২টার দিকে সেই ফ্রিজিং ভ্যানের দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখা যায় নতুনবাজার এলাকার আরেক গৃহিণী নাজমা বেগমকে। তবে ভ্যানের কাছে এসেই আশাহত হয়ে পড়েন তিনি; জানতে পারেন ডিম ও দুধ শেষ।
আক্ষেপের সুরে নাজমা বলেন, 'সকাল ১০টার দিকে একবার এসেছিলাম। আধাঘণ্টার মতো অপেক্ষা করি। কিন্তু গাড়ি না আসায় বাসায় চলে যাই। পরে বাচ্চাকে স্কুল থেকে নেওয়ার সময় আবারও আসি। তবে এবার এসে গাড়ি পেলেও তারা জানায় যে ডিম ও দুধ নেই।'
'আমার ছোট দুই সন্তান। বাজারে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের দাম অনেক। ওদের ঠিকমতো খাওয়াতে পারি না। এখানে কম দামে পাওয়া যায় শুনে এসেছিলাম। তবে আজ ডিম-দুধ পাইনি, কাল আবার আসব', বলেন তিনি।
নতুন বাজার এলাকার ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানের দায়িত্বে ছিলেন শাহাদাত হোসেন। তবে সেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। শাহাদাত জানান, তারা ভলান্টিয়ার হিসেবে এই উদ্যোগে কাজ করছেন।
গাড়ি দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, 'খামারবাড়ি থেকেই সকাল ১০টার দিকে আমাদের গাড়ি ডিস্ট্রিবিউট করা হয়। রাস্তায় যানজটের কারণে এখানে আসতে এক ঘণ্টার মতো দেরি হয়েছে।'
বিক্রি শুরুর ৪০ মিনিটের মধ্যেই দুধ ও ডিম শেষ কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঢাকার ২৫টি পয়েন্টে এভাবে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি হচ্ছে। একেক এলাকার চাহিদা বুঝে দুধ, ডিম ও মাংস সরবরাহ করা হয়। আজ যেমন আমরা আনুমানিক এক হাজার ৫০০ ডিম, ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৭০ কেজি মুরগির মাংস নিয়ে এসেছি। ডিম ও দুধের চাহিদা বেশি। তাই এগুলো আগেভাগেই শেষ হয়ে যায়।'
এখানেই কথা হয় নতুনবাজার এলাকার একটি বাণিজ্যিক ভবনের লিফটম্যান মো. আবু হোসেন ও ডাব বিক্রেতা নুরুল কবিরের সঙ্গে।
তারা জানান, রোজা শুরুর আগের দিন তারা দুজনেই ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে দুধ, ডিম ও মাংস কিনেছেন। রোজার আগুন গরম বাজারের চেয়ে বেশ কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য পেয়ে তারা খুশি। এমনকি এখানে বিক্রি হওয়া দুধ, ডিম ও মাংসের মান নিয়েও তারা সন্তুষ্ট।
তারা বলেন, মানুষ এখনো ঠিকভাবে জানে না যে ঢাকার কোথায় কোথায় ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি হচ্ছে। একজন আরেকজনের কাছ থেকে শুনে এখানে আসছেন। তবে ১০টার দিকে গাড়ি আসবে বললেও একেকদিন একেক সময়ে আসছে। এ জন্য কেউ কেউ ভোর থেকে অপেক্ষা করে শেষে বিরক্ত হয়ে ফিরেও যান।
রাজধানীর মোট ৩০টি স্থানে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করার কথা জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, যার মধ্যে ২৫টি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র ও পাঁচটি স্থায়ী বাজার।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রগুলো হলো—নতুন বাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আবদুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা), বছিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (সেকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) ও কাকরাইল।
আর স্থায়ী বাজার হলো—মিরপুর শাহ আলী বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর ও কাজী আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)।
মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে মাছ বিক্রি
রমজান উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের আটটি পয়েন্টে মাছ বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
সরেজমিনে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফার্মগেট পয়েন্টে গিয়ে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকেই তারা মাছ বিক্রি শুরু করেছেন। ১০টার আগেই মাছের গাড়ি ওই এলাকায় পৌঁছেছে। সেখানে চার ধরনের মাছ আছে—পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই ও পাবদা।
এই পয়েন্টের দায়িত্বে ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুয়েল শেখ। ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, সবমিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৩০০ কেজি মাছ এখান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
আজ ছিল পাঙাশ ১০০ কেজি, তেলাপিয়া ১২৩ কেজি, রুই ৬১ কেজি ও পাবদা ১০ কেজি। পাঙাশের দাম প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, রুই ২৪০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা ও পাবদা ৩৩০ টাকা।
এই কর্মকর্তা বলেন, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই পয়েন্টে তাদের মাছ বিক্রি করার কথা। কিন্তু এর আগেই শেষ হয়ে গেলে তারা চলে যান।
গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে সব মাছ শেষ হয়ে যায়। জনপ্রতি সর্বোচ্চ দুই কেজি করে মাছ কিনতে পারছেন।
'১৫ থেকে ২০ রমজান পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম চলবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই মাছগুলো আসে। মূলত একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এসব মাছ সংগ্রহ করা হয়', বলেন তিনি।
মাকে নিয়ে চিকিৎসার কাজে টঙ্গী থেকে খামারবাড়ি এলাকায় এসেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া কুমকুম সরকার। গাড়ি দেখে সেখান থেকে তিনি রুই মাছ কেনেন।
ডেইলি স্টারকে লামিয়া বলেন, 'এটা ভালো উদ্যোগ। এখানে মাছের দাম বাজারের চেয়ে কম, মাছও ভালো। তাই কিনে নিলাম।'
'আমাদের বাসা টঙ্গী এলাকায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সেখানেও এরকম বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কারণ, সেখানে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ বসবাস করেন। তাদের অনেক উপকার হবে', যোগ করেন তিনি।
ফার্মগেট ছাড়া মাছ বিক্রির বাকি সাতটি পয়েন্ট হলো—উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুর-১ (ঈদগাহ মাঠ), সেগুনবাগিচা বাজার ও মেরুল বাড্ডা বাজার এবং দক্ষিণ সিটির আওতাধীন মুগদাপাড়া (মদিনাবাগ বাজার), যাত্রাবাড়ী (দয়াল ভরসা মার্কেট), মতিঝিল (এজিবি কলোনি, মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক) ও পলাশী মোড়।
Comments