‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্ভোগের জন্য দুই দেশের সিন্ডিকেট দায়ী’
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা ও তাদের দুর্ভোগের জন্য দুই দেশের জনশক্তি সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম।
প্রবাসী কর্মীদের দুর্ভোগের উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, 'আমরা যে এ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, তার একটি কারণ হলো সিন্ডিকেট, যারা এখানে (বাংলাদেশ) এবং মালয়েশিয়াতে সক্রিয়।'
আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাইকমিশনার হাজনাহ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'এ সমস্যা মোকাবিলায় উভয় দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।'
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মহীন, বিনা বেতনে কিংবা স্বল্প বেতনে এবং ঋণগ্রস্ত হয়ে দেশটিতে অবস্থান করছেন প্রায় ১-২ লাখ বাংলাদেশি।
প্রবাসী কর্মীদের সমস্যা মালয়েশিয়া কীভাবে সমাধান করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, 'মালয়েশিয়ায় প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি কাজ করেন। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের অবদানের প্রশংসা করে মালয়েশিয়া সরকার।'
২০২২ সালের শেষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখের বেশি কর্মী মালয়েশিয়া গেছে। কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটকে দায়িত্ব দেয় এবং পরে এজেন্সির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০টি।
অভিবাসীরা বলছেন, তাদের প্রত্যেককে নিয়োগের জন্য প্রায় ৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশ সেখানে গিয়ে কাজ পাননি বা স্বল্প বেতনে কাজ পেয়েছেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচের টাকা অনেককে ঋণ করে দিতে হয়েছে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার বলেন, 'মালয়েশিয়া সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং সমস্যা সমাধানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।'
হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে এবং তারা এ ব্যাপারে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবে।'
'মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কর্মীদের সুস্থতার দিকে আমাদের যথেষ্ট অগ্রাধিকার,' বলেন তিনি।
হাজনা মো. হাশিম আরও বলেন, 'মালয়েশিয়া চায় বাংলাদেশিরা বৈধ উপায়ে সেখানে যান। যেন তারা প্রতারিত না হন এবং কাজের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করেন।'
মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, 'এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'মালয়েশিয়া আমাদের দেশে অষ্টম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী। আমরা আলোচনা করেছি যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বিনিয়োগ করতে পারে।'
মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের কল্যাণের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আলোচনায় হাইকমিশনার বাংলাদেশের কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি এবং সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের মতো মেডিকেল ট্যুরিজমের বিষয়ে মালয়েশিয়ার আগ্রহের কথা জানান।
Comments