আপনারা জানেন না সীমান্তে কত ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে: বিএসএফ প্রধান

আপনারা জানেন না সীমান্তে কত ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে: বিএসএফ প্রধান
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও বিএসএফ মহাপরিচালক নীতিন আগারওয়াল (বাম থেকে) | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

কেবলমাত্র আত্মরক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায় উল্লেখ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান নীতিন আগারওয়াল বলেছেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের পাঁচ দিনব্যাপী ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে আজ শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং বিএসএফ মহাপরিচালক নীতিন আগারওয়ালের নেতৃত্বে নয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেন।

একজন গণমাধ্যমকর্মী এই সম্মেলনের ফলাফল কী জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, 'আমরা দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা সিদ্ধান্তের পৌঁছেছি উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক বিষয়গুলোতে আমরা যৌথভাবে কাজ করব। এর মধ্যে থাকবে চোরাচালান প্রতিরোধ, সীমান্ত অপরাধ ও সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধ।'

বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে ভারতের অবদান আমরা কখনো ভুলিনি। তবে সীমান্ত হত্যার কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও কেন শূন্যের কোটায় নামানো যাচ্ছে না মৃত্যু—জবাবে বিএসএফ প্রধান বলেন, 'সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমাদের উদ্যোগের পরও ভারত ও বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে আমরা অস্ত্রনীতি পরিবর্তন করেছি। প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করছি। এর মাধ্যমে যতদূর সম্ভব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

'সীমান্ত এলাকায় অপরাধী চক্র বেশ সক্রিয়। তারা দায়িত্বরত বিএসএফ ও বিজিবি সদস্যদের ওপরও হামলা চালায়। কখনো কখনো দুই পক্ষকেই আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে হয়,' যোগ করেন তিনি।

নীতিন বলেন, 'আমি নিশ্চিত আপনি জানেন, ৬০ বিএসএফ সদস্য সীমান্ত অপরাধীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা অস্ত্র হিসেবে দা ব্যবহার করে। বিএসএফ সদস্যদের শরীরের স্পর্শকাতর অংশে দায়ের গুরুতর আঘাত রয়েছে, যেটা গভীর উদ্বেগের বিষয়। কেবলমাত্র এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায় যাতে বাংলাদেশি ও ভারতীয় অপরাধীর মৃত্যু হয়।'

গত কয়েক বছর ধরে সীমান্ত হত্যা আবারও বাড়ছে। আমরা অনেক সময় দেখি, নিহত বাংলাদেশির মুখ-মণ্ডল, বুকে ও শরীরের উপরিভাগে আঘাতের চিহ্ন। আপনি বলেছেন অস্ত্রনীতি পরিবর্তন করা হয়েছে, কেবলমাত্র আত্মরক্ষায় গুলি চালায় বিএসএফ—কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আমরা এর বিপরীত চিত্র দেখি। প্রকৃত ঘটনা জানতে কেন বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হচ্ছে না? কেন যৌথ তদন্ত করা হয় না জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, 'আপনি বললেন মুখ-মণ্ডল, বুকে ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত থাকে, এটাই কম দূরত্বে এসে হামলা প্রমাণ করে। দা নিয়ে হামলা চালাতে হলে খুব কাছে চলে আসতে হয়; যখন একজন মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে, কেউ দা নিয়ে হামলা করছে, গুলি চালানোর তখন তিনি হাত-পা, শরীরের অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনোযোগ দিতে পারে না।'

তিনি বলেন, 'এটা হয় যখন কেউ গুরুতর মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। দ্বিতীয়ত, সীমান্তরক্ষীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়। দূরত্ব বেশি হলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না কিন্তু দূরত্ব কম হলে নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে। এমনকি কম দূরত্বে রাবার বুলেটও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। দয়া করে এটা বোঝার চেষ্টা করুন। দায়ের কোপে গত এক বছরে ৬০ বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন।

'আপনারা জানেন যখন সীমান্তে মৃত্যু হয়, আপনারা জানেন না সীমান্তে কতজন ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আপনারা জানেন না কতগুলো ঘটনায় আমরা হত্যা না করে গ্রেপ্তার করেছি,' যোগ করেন তিনি।

কেবল হত্যা নয়, পুরো চিত্র দেখার আহ্বান জানিয়ে বিএসএফ প্রধান বলেন, 'তাহলেই উপলব্ধি করা যাবে, সীমান্তে মৃত্যু রোধে আমরা আমরাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি; বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিক উভয়ের ক্ষেত্রে।'

এ সময় তিনি সীমান্ত হত্যা বন্ধে আরও নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

বিএসএফ প্রধান বলেন, 'আমরা যৌথভাবে সীমান্ত পাহারা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বন্ধে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসবের মাধ্যমে আশা করছি সীমান্ত হত্যা কমে আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Income inequality in Bangladesh

Growth obsession deepened rich-poor divide

Income inequality in Bangladesh has seen a steep rise over the past 12 years till 2022, according to official data, as economists blame a singular focus on growth rather than sorting out income disparities.

16h ago