বহিরাগতদের হস্তক্ষেপের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ভোটগণনা স্থগিত

এসসিবিএ মিলনায়তনের ভেতর অবস্থিত পোলিং সেন্টারে ভোট গণনার সময় উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবীর ওপর বহিরাগতরা হামলা চালায়।
এসসিবিএ মিলনায়তনে ভোট গণনার সময় বহিরাগতদের হামলা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের (এসসিবিএ) দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোট গণনা স্থগিত করা হয়েছে। এক প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে বহিরাগতরা ভোটগণনায় হস্তক্ষেপ করেছেন—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।  

আজ শুক্রবার সকালে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এসসিবিএ মিলনায়তনের ভেতর অবস্থিত পোলিং সেন্টারে ভোট গণনার সময় উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবীর ওপর বহিরাগতরা হামলা চালায়।

এই হামলায় কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। এই ঘটনার জেরে সৃষ্ট অস্থিরতা ও অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রার্থী ও নির্বাচন উপকমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী এ সময়য় এসসিবিএ প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান। এসসিবিএ সূত্র এই তথ্য জানায়। 

ইতোমধ্যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে এসসিবিএর সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেন। ভোট গণনার সময় অন্য কোনো প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যুথি এই পদে লড়েন।

এ বিষয়ে আজ শুক্রবার সকালে দ্য ডেইলি স্টার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবুল খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে তিনি পুলিশী প্রহরায় এসসিবিএ প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন। তিনি আরও জানান, ব্যালট বাক্সগুলো পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী, এসসিবিএর নির্বাচন উপকমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আবুল খায়ের বলেন, 'আপনাদের বুঝতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে আমি একজন প্রার্থীকে (যুথি) নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। আমি বৃদ্ধ এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ বেশ কয়েক ধরনের রোগে ভুগছি। আপনারা আমার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন।'

অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথির সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এসসিবিএর সূত্ররা জানান, নির্বাচন কমিশন আজ ভোর পর্যন্ত ভোট গণনা করেছে।

ক্লান্তিজনিত কারণে বেশিরভাগ প্রার্থী ও আইনজীবীরা নির্বাচন কমিশনকে দিনের পরবর্তী অংশে ভোট গণনার অনুরোধ জানান।

কিন্তু নাহিদ সুলতানা যুথি ও তার সমর্থকরা নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ভোট গুণে নির্বাচনের ফল ঘোষণার অনুরোধ জানান।

সূত্রদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও সংঘাত শুরু হলে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এসসিবিএ নির্বাচনের দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

মোট সাত হাজার ৮৮৮ ভোটারের মধ্যে পাঁচ হাজার ৩১৯ জন আইনজীবী ঢাকার এসসিবিএ মিলনায়তনে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের (এসসিবিএ) সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৪টি কার্যনির্বাহী পদের জন্য এই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।

এসসিবিএ সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মধ্যে।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে সিনিয়র আইনজীবী আবু সাঈদ সাগর সভাপতি ও শাহ মঞ্জুরুল হক সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা অ্যাডভোকেট দুলাল।

অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল থেকে সভাপতি ও সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যথাক্রমে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এ ছাড়া, সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও মো. ইউনুস আলী আকন্দ।

সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন নাহিদ সুলতানা যূথী ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া।

গত বছর একতরফা নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সব পদে জয়লাভ করে।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নির্বাচনে ভোট দেননি। তারা সেই নির্বাচনকে 'প্রহসনের নির্বাচন' বলে দাবি করেন।

Comments