কর্ণফুলীতে এস আলমের পোড়া চিনি: শূন্যের কোঠায় পানির অক্সিজেন

এস আলম গ্রুপের পোড়া গুদাম থেকে চিনিমিশ্রিত লাল রঙের পানি মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। ছবি: রাজীব রায়হান

এস আলম গ্রুপের পুড়ে যাওয়া চিনিকলের গুদাম থেকে দূষিত পানি গিয়ে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। দূষণের ফলে নদীর একটি এলাকায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে।

নদীর দুইটি পয়েন্টের পানি পরীক্ষা করে আজ এ তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগার।

পরীক্ষায় দেখা যায়, ইছানগর এলাকায় প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ০.৭৯ মিলিগ্রাম। বাংলাবাজার ঘাটে অক্সিজেনের মাত্রা পাওয়া যায় প্রতি লিটারে ১.২১ মিলিগ্রাম।

মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মাত্রা ৬ এর নিচে হলে তা জলজ প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক।

গত সোমবার ইছানগরে এস আলমের চিনিকলের গুদামে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত পানির সঙ্গে কারখানায় থাকা পোড়া চিনি ও অন্যান্য উপাদান মিশে সেগুলো নদীতে পড়ে। এতে নদীর পানির রং বদলে কালচে হয়ে যায়। এরপর থেকে নদীতে মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে শুরু করে।

নদীতে কালো পানি ছড়িয়ে পড়ার পরদিন মঙ্গলবার দুটি পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করে গবেষণাগারের একটি টিম।

অন্যদিকে, আজ বৃহস্পতিবার নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মৃত অবস্থায় অন্তত ১১ প্রজাতির মাছ ও কাঁকড়া উদ্ধার করেছে মৎস্য অধিদপ্তরের একটি টিম। এরমধ্যে কর্ণফুলীতে বিপদে থাকা গুলশাসহ কয়েক প্রজাতির মাছও আছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ ডেইলি স্টারকে বলেন, মৃত অবস্থায় আমরা ১১ প্রজাতির জলজ প্রাণী উদ্ধার করেছি। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা সংরক্ষণ করেছি।

মারা যাওয়া ১১ প্রজাতির প্রাণীগুলো হলো গলদা চিংড়ি, গুলশা, লাল চেওয়া, কুকুরজিব (বাংলা), দুই ধরনের বাইলা, দাতিনা কোরাল, টেক চাঁদা, দুই ধরনের পোয়া ও দেশি কাঁকড়া।

মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মাত্রা ৬ এর নিচে হলে তা জলজ প্রাণী জন্য বিপজ্জনক। চিনিকলের তরল বর্জ্য নদীতে মিশে অক্সিজেনের মাত্রা কমে মাছ মারা যাচ্ছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।

কী পরিমাণ মাছ মারা গেছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের হিসাব করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের ১৯৭৬ সালের গবেষণা অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীতে ৭৬ প্রজাতির মাছ বিচরণ করত।

তবে ২০১৪ সালের জুনে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধে কর্ণফুলী থেকে গুলশাসহ ২০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

'কর্ণফুলী কি বুড়িগঙ্গা হয়ে যাবে' শীর্ষক সেমিনারটি পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সেসময় আয়োজন করা হয়েছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের উপ-পরিচালক ও রসায়নবিদ কামরুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেলে জলজ প্রাণী টিকে থাকতে পারে না। ওই দুই পয়েন্টে পানির পিএইচ স্বাভাবিকের চেয়ে কম (অম্লীয়) ছিল, প্রাণীদের জন্য যা বিপজ্জনক।

Comments

The Daily Star  | English

Wasa water stinks

For the past two weeks, Siddiqur Rahman, a resident of Shantibagh in Dhaka, has been receiving water from Dhaka Wasa infested with insects and accompanied by a strong stench.

12h ago