সুর পেল জীবনানন্দের ৫ গান

ছবি: টিটু দাস/স্টার

আজীবন জলের মতো ঘুরে ঘুরে একাকী কবিতাচর্চা করা 'শুদ্ধতম কবি' জীবনানন্দ দাশ বেশ কয়েকটি উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধও লিখেছিলেন। তবে তিনি যে কবিতার ছলে গানও লিখেছিলেন- এতদিন তা ছিল অজানা।

সম্প্রতি জীবনানন্দ দাশের লেখা ১৫টি গানের খোঁজ মিলেছে। এরমধ্যে পাঁচটি গানে সুরারোপ করে পরিবেশন করেছেন বরিশালের চার শিল্পী।

কবির নিজ স্কুল ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে 'জীবনানন্দ জয়ন্তী-২০২৪' আয়োজনে জীবনানন্দ গবেষক আমীন আল রশীদ বলেন, 'জীবনানন্দ দাশ জীবদ্দশায় প্রচুর কবিতা লিখেছেন। তার বেশ কিছু কবিতায় সুর দিয়ে গান তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আলাদা করে গানের কথা তেমনভাবে কারও জানা ছিল না। দেবী প্রসাদের বইতে অবশ্য ইঙ্গিত ছিল কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে রক্ষিত ৪১ নং ডায়েরিতে গানের বিষয়টি। পরে বিভিন্ন প্রকাশনা খুঁজে খুঁজে আমি অন্তত ১৫টি গানকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। আমার জানামতে, এতদিন এই গানগুলোতে কেউ সুরারোপ করেননি। সে হিসেবে আজকেই জীবনানন্দের এই পাঁচটি গানের প্রথম সুর ও গীত আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।'

জীবনানন্দ দাশ কেন গান লিখেছেন? আমীন আল রশীদ বলেন, 'সম্ভবত আর্থিক অনটনের কারণে তিনি গান লিখেছেন। সেসময় সিনেমার গান লিখে ভালো আয় করা সম্ভব এমন পরামর্শেই তিনি এই গানগুলো রচনা করে থাকতে পারেন। তবে এই গানগুলোর স্ট্রাকচার কবিতার মতোই— আলাদা করে গান হিসেবে বোঝার উপায় নেই। এই গানগুলোর রচনাকাল ১৯৪৬ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, কবি সেসময় ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষক। এর কিছুদিন পরেই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তিনি চলে যান কলকাতায়।'

'জীবনানন্দের এসব গান সিনেমায় জায়গা পায়নি। হয়তো পরিচালকরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অথবা তিনি এই গানগুলো কাউকে দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। আজ এই গান রচনার ৭৮ বছর পর কবির ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে, পৃথিবীতে সম্ভবত প্রথমবারের মতো পরিবেশন হচ্ছে দেখে আমি শিহরিত', বলেন তিনি।

তবে জীবনানন্দ দাশের রচিত কবিতা গানের সুরে গাওয়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এ বিষয়ে আমীন আল রশিদ বলেন, 'যেমন "বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর"-এই কবিতায় প্রথম সুর ও কণ্ঠ দেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ অজিত রায়, ১৯৬৯ সালে। জীবনানন্দের কবিতাকে গান হিসেবে গাওয়ার এই প্রয়াসই সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন। সমসাময়িককালে তিনি 'আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে– এই বাংলায়' কবিতারও সুরারোপ করেন বলে জানা যায়। পরে এটি বহু শিল্পীর কণ্ঠে গীত হয়েছে।'

জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব জাহিদ আবদুল্লাহ রাহাত বলেন, 'গতকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি কবির জন্মদিনে বরিশালের চার গুণী শিল্পী এই গানগুলো সুরারোপ করে মঞ্চে পরিবেশন করেছেন। তবে সুরারোপ নিয়ে তাদের মধ্যে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছিল। তা সত্ত্বেও পরিবেশনের পর জীবনানন্দের গানগুলো বেশ সমাদৃত হয়।'

জীবনানন্দ দাশ রচিত 'সারাদিন আমি কোথায় ছিলাম, আলো...ঘুমনগরীর রাজার কুমারী জাগে' গানটির সুর ও সংগীত পরিবেশন করেন সোহেল রানা, 'আজ বিকেলের ধূসর আলোয়' গানটির সুর ও সংগীত পরিবেশন করেন মৈত্রী ঘড়াই, 'কাউকে ভালোবেসেছিলাম জানি' গানের সুর ও সংগীত পরিবেশন করেন মৈত্রী ঘড়াই ও সঞ্জয় হালদার, 'তুমি আমার মনে এলে' গানের সুর ও সংগীত পরিবেশন করেন সঞ্জয় হালদার, 'মনে পড়ে আমি ছিলাম বেবিলনের রাজা' গানটির সুর ও সংগীত পরিবেশন করেন রিপন কুমার গুহ।

এ বিষয়ে সুরকার মৈত্রী ঘড়াই বলেন, 'কবির গানে সুরারোপ করে ইতিহাসের অংশ হতে পেরে দারুণ অনুভূতি হচ্ছে।'

জীবনানন্দের বরিশালে প্রথমবারের মতো তার গানে সুরারোপ করে মঞ্চে উপস্থাপনকে স্বাগত জানিয়েছেন বহু শিল্পী, দর্শক। অচেনা এসব গানের সুরের অনুভূতি আরও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কবি দীপংকর চক্রবর্তী।

Comments

The Daily Star  | English

India’s white-ball tour of Bangladesh deferred to September 2026

The Bangladesh Cricket Board (BCB) on Saturday confirmed that India’s white-ball tour of Bangladesh, originally scheduled for next month, has been postponed to September 2026.

36m ago