প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: ডেইলি স্টার সম্পাদকের বক্তব্য

প্রিয় পাঠক, পৃষ্ঠপোষক এবং শুভানুধ্যায়ী,

দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের (১৫) মর্মান্তিক মৃত্যুর ১০ দিন পর বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হওয়ায় আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় জরুরিভিত্তিতে আমাকে নয়াদিল্লিতে কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টা আগে আমি দেশে ফিরেছি এবং জনমনে উত্থাপিত কিছু প্রশ্ন, বিশেষ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে আপনাদের সামনে এসেছি। মোহাম্মদপুরের ওই ভবনের নবমতলা থেকে পড়ে প্রীতি উরাং মারা যায়। প্রীতির বাড়ি মৌলভীবাজার এবং যেখানে তার বাবা ও মা চা-শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

প্রীতি উরাংয়ের মর্মান্তিক, দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। উন্নত জীবন পেতে ঢাকায় আসা প্রীতি প্রাণহীন হয়ে বাড়ি ফিরেছে। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। এ দেশের প্রতিটি শিশুর জীবন সুন্দর হোক, আমরা সেই কামনা করি এবং সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাদের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

আমাদের পাঠক ও পৃষ্ঠপোষক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমের একটি অংশে মূলত দুটি প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমটি, অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক হওয়ার কারণে শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে আমরা কি তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করছি? এবং দ্বিতীয়টি, আমরা কি এ ঘটনায় সেভাবেই প্রতিবেদন প্রকাশ করছি, যেভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রে করি?

আমরা প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার আহ্বানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানাই এবং সত্য উদঘাটন ও এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রীতির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়, ঢাকার একটি আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং বিজ্ঞ বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। পরে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং আরেকজন বিজ্ঞ বিচারকের আদেশে বর্তমানে তারা চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। আইনের এই যথাযথ প্রক্রিয়ায় কোথাও আমাদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের চিহ্নও নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আইন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজস্ব গতিতেই চলবে।

আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ঘটনার সঙ্গে কে জড়িত তা বিবেচনায় না নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার এই মামলার বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করবে; যেমনটি অন্য সব ক্ষেত্রে করে থাকে। আমাদের কোনো প্রতিবেদন কোনোভাবেই প্রভাবিত হবে না বা আমরা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো পক্ষপাতিত্ব দেখাব না। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। তবে, পাঠকদেরও সতর্ক করতে চাই যে, কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাটি বিকৃত ও অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে।

আমরা সব ধরনের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রতিবেদন প্রকাশ করছি এবং শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখতে দ্য ডেইলি স্টারের নীতিতে অটল রয়েছি। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে আমরা অগ্রগামী এবং এই অবস্থান অক্ষুণ্ন থাকবে। সংখ্যালঘু, বিশেষ করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সমুন্নত রাখা আমাদের অন্যতম মূলনীতি।

দ্য ডেইলি স্টার মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি সংবাদপত্র, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অন্যান্য অধিকার ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি পরিপূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের নীতি ও মূল্যবোধ লালন করি এবং সকল অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা সম্পর্কে যারা আমাদের প্রতিনিয়ত সচেতন করে চলেছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সমালোচকদেরও ধন্যবাদ জানাই, যারা মনে করেছেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্য ডেইলি স্টারের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত থাকায় আমরা আমাদের মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হতে পারি। আমরা তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ, যারা এ বিষয়ে আমাদের গৃহীত অবস্থান না দেখেই দ্য ডেইলি স্টারকে বিচার করেছেন।

আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ যে আপনারা আমাদের কর্তব্য বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। আবারও দৃঢ়চিত্তে বলছি, আমরা আমাদের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হবো না। কেননা, আমাদের ডিএনএতে, প্রাতিষ্ঠানিক নীতিতে এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাসে এটি গেঁথে রয়েছে।

ধন্যবাদ,
মাহফুজ আনাম
সম্পাদক ও প্রকাশক
দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

5h ago