‘টাঙ্গাইল শাড়ি’কে ভারতীয় জিআই নিবন্ধনের প্রতিবাদে ১৯ নাগরিকের বিবৃতি

‘বিলম্বে হলেও টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে ভারতে নিবন্ধন বাতিলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রকে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানাই।’

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতবস্ত্র 'টাঙ্গাইল শাড়ি'কে ভারত তাদের 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই)' হিসেবে নিবন্ধন করায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশে ১৯ নাগরিক।

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল। মধুপুর গড়, বিল ও নদী সমভূমির এক বিরল সমন্বয় টাঙ্গাইল। 'টাঙ্গাইল শাড়ি' কিংবা 'টাঙ্গাইল পোড়াবাড়ি চমচম' এই প্রাচীন ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক নির্দেশক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও পূর্ববর্ধমান অঞ্চলে উৎপাদিত তাঁতবস্ত্রকে 'টাঙ্গাইল শাড়ি' হিসেবে নিবন্ধন করার ভেতর দিয়ে কেবল 'টাঙ্গাইল শাড়ি' নয় বরং সেইসব অঞ্চলের তাঁত-ঐতিহ্যের ভৌগোলিক নির্দেশনাকেও এই প্রক্রিয়ায় অমান্য করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে টাঙ্গাইল শাড়ির উদ্ভব এবং কয়েকশ বছর ধরে এখনো এখানে 'টাঙ্গাইল শাড়ি' বোনা হচ্ছে।          দেশভাগসহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতশিল্পীদের একাংশের দেশান্তর ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও পূর্ববর্ধমানের বিভিন্ন অঞ্চলে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে দেশান্তরিত তাঁতিরা ভারতে তাদের নয়াবসতিতেও তৈরি করে চলেছেন তাঁতবস্ত্র। যা সেইসব অঞ্চলের ভৌগোলিক নির্দেশনাকে প্রকাশ করলেও কোনোভাবেই 'টাঙ্গাইল শাড়ি' নয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় অঞ্চলের তাঁতপণ্য কী নামে কীভাবে নিবন্ধিত হবে এটি একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধনের বিষয়টি বাংলাদেশের। ভারত কর্তৃক 'টাঙ্গাইল শাড়ি'কে নিবন্ধন করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধনের আন্তর্জাতিক নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেবল ঐতিহ্য বা তাঁতিদের পেশাগত ঝুঁকি নয়, একইসঙ্গে টাঙ্গাইল তাঁতশিল্পীদের মেধাসম্পদ অধিকারও এ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হতে পারে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য কেবল একটি এলাকার ঐতিহ্যগত পেশা, বাণিজ্য, জীবিকার সঙ্গেই সম্পর্কিত নয়; বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোনো ভূগোলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের বিষয়। বাংলাদেশ ২০১৩ সালে 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন' তৈরি করে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে জামদানি শাড়িকে দেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করে। ইতোপূর্বে ২১টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে বাংলাদেশ। এতদিনেও 'টাঙ্গাইল শাড়িকে' বাংলাদেশের জিআই হিসেবে নিবন্ধন না করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও অমনোযোগিতার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিলম্বে হলেও 'টাঙ্গাইল শাড়িকে' বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে 'টাঙ্গাইল শাড়ি' নামে ভারতে নিবন্ধন বাতিলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রকে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানাই। 'টাঙ্গাইল শাড়ি'র যাবতীয় প্রামাণিক দলিলসহ জাতিসংঘের 'বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডাব্লিউআইপিও)' কাছে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে সরকারকে আহ্বান জানাই। 'টাঙ্গাইল শাড়ি'সহ দেশের সব প্রান্তের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য দ্রুত তালিকাভুক্তি এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া সক্রিয়করণের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক মেধাসম্পদ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে আহ্বান জানাই।

এই বিবৃতিতে সই করেছেন মেধাসম্পদ সুরক্ষা মঞ্চের (মেধাসুম) আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান, জাতিসংঘ শুভেচ্ছাদূত বিবি রাসেল, জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, মেধাসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. তানভীর হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীর, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নারী অধিকার নেত্রী ফরিদা আখতার, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রউফ, প্রাণবৈচিত্র গবেষক পাভেল পার্থ, লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, নদীগবেষক শেখ রোকন, ব্যারিস্টার তাসনুভা শেলী, ব্যারিস্টার উলোরা আফরিন, লেখক মোহাম্মদ আলী, মেধাসুমের সদস্য সচিব আলী নাঈম।

Comments

The Daily Star  | English

Singapore’s Financial Intelligence Unit seeks info on S Alam Group

The overseas assets of S Alam Group, including those in Singapore, came under scrutiny following recent media reports.

2h ago