বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ, ফতুল্লায় শ্রমিক বিক্ষোভ

ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে অবন্তী কালার টেক্স কারখানাটির শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/ স্টার

বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই নারায়ণগঞ্জে ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড বন্ধ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে কারখানার শ্রমিকরা।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুই ঘণ্টা ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলে কারখানাটির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে কয়েকশ শ্রমিক।

এতে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়৷ পরে শিল্প পুলিশ সদস্যরা কারখানার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামী সোমবার বকেয়া পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

এর আগে ডিসেম্বর মাসের আংশিক ও জানুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেন কারখানার শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে 'বেআইনিভাবে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির' কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।

এ এইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন কারখানাটির ডাইং ও নিটিংসহ বিভিন্ন সেকশনে অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা।

শনিবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কারখানাটির সুইং শাখার শ্রমিক লিপি বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকালে আমরা এসে দেখি কারখানা বন্ধ, ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না৷ কারখানার সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে। কিন্তু আমাদের তো বেতন দেয়নি, কবে দেবে তাও বলেনি। শহরে থাকি, বাসাভাড়া দিতে পারি নাই। বাড়িওয়ালা তাগাদা দিচ্ছে, বাকির মাসকাবারির দোকানদার তাগাদা দিচ্ছে। আমাদের বেতন না দিলে যাব কোথায়?'

অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডে সুইং অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন মধ্যবয়সী বানেছা বেগম৷ মাসে ৪ হাজার টাকা বাসাভাড়া, দুই কন্যার লেখাপড়াসহ সাংসারিক খরচ তার একার উপার্জনে বহন করতে হয়।

বেতন না দিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করায় দিশেহারা এ পোশাক শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাসাভাড়া দিতে পারিনি। বাজারঘাট করতে পারছি না, মেয়েদের স্কুলের বেতন দেবো কীভাবে? কয় মাস ধইরা এইরকম করতেছে মালিক। আন্দোলন না করলে টাকা দেয় না। টাকা দিলেও কিস্তিতে দেয় কিন্তু এই মাসে তাও দেয় নাই৷ উল্টা কারখানা বন্ধ করে দিছে।'

'আমরা তো কারও কাছে দয়া চাই না৷ আমাদের কাজের বিনিময়েও টাকা দিচ্ছে না।'

ঘটনাস্থলে থাকা শিল্প পুলিশ-৪ এর নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গণেশ গোপাল বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। বকেয়া পরিশোধ করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি তাদের৷ কারখানার মালিকের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি আগামী সোমবার বেতন দিবেন বলে জানিয়েছেন। একথা শ্রমিকদের জানালে তারা আশ্বস্ত হয়ে বিক্ষোভ শেষ করে।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে মিছিল করতে করতে শ্রমিকরা কারখানার সামনে থেকে সরে গেলেও শিল্প পুলিশের সদস্যদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর 'অর্ডার কমে যাওয়ার' কথা জানিয়ে ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান 'ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড' কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদে পরদিন সকালে কারখানাটির কয়েকশ শ্রমিক ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে, বেলা এগারোটার দিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন রূপসী গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক।

শ্রমিকরা বলেন, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে৷ তাদের বেতন না দিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

A floating mosaic of guavas, baskets and people

During the monsoon, Jhalakathi transforms into a floating paradise. Bhimruli guava market comes alive with boats carrying farmers, buyers, and tourists.

11h ago