মহিষের ঘানি, আখ ও বিজয়নগরের লালিগুড়
সুকুমার রায় লিখেছিলেন, 'শিমুল তুলো ধুন্তে ভাল,/ঠাণ্ডা জলে নাইতে ভাল,/কিন্তু সবার চাইতে ভাল-/পাউরুটি আর ঝোলা গুড়।'
বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে গুড় একটি জনপ্রিয় ও পরিচিত অনুষঙ্গ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খেজুর, আখ, তাল কিংবা গোলের রস থেকে নানা পদের গুড় তৈরি হয়। এর মূল উপকরণ ভিন্ন হলেও তৈরির প্রক্রিয়া মোটামুটি একই। আর গুড়ের নাম ভিন্ন হয় সাধারণত এর ঘনত্বের তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে।
রস সামান্য ঘন হয়ে এলে অঞ্চলভেদে এর নাম হয় রাব, লালি, নালি কিংবা মধু গুড়। এর থেকে খানিকটা বেশি ঘন হলে তার নাম হয় ঝোলা গুড়, কিংবা দানা গুড়। এ অবস্থা থেকে আরও বেশি ঘন, কঠিন বা শক্ত হয়ে এলে তার নাম হয় পাটালি।
ব্রাহ্মবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা বিখ্যাত আখের রস থেকে তৈরি লালিগুড়ের জন্য। এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো গুড় তৈরির রসের জন্য সেই আখ ভাঙানো হয় মহিষের ঘানিতে।
এখন শীত মৌসুমে বিজয়নগরে চলছে লালি তৈরির কর্মযজ্ঞ। প্রথমে মহিষের চোখ ঢেকে ঘানি টানানোর মাধ্যমে আখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর রস জমিয়ে ছাকনি দিয়ে ছেকে রাখা হয় বড় পাত্রে। সেই রস জ্বাল দিতে দিতে লাল হয়ে আসলে তা নামানো হয় পাত্র থেকে। মোটের ওপর এটাই আখের লালিগুড় তৈরির প্রক্রিয়া।
বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার এখনো এই প্রক্রিয়ায় গুড় উৎপাদন করে থাকেন।
সম্প্রতি বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে ঘানিতে আখ ভাঙানোর এই ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক মাসুক হৃদয়।
Comments