‘গেল এক যুগেও অ্যাদোন জার হামরা দ্যাখোং নাই’

সারডোব গ্রামের একজন কৃষি শ্রমিক ঠান্ডা থেকে বাঁচতে খড়কুটোর আগুনের তাপ নিচ্ছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়

দিনমজুর সেকেন্দার আলী (৫৭)। কুড়িগ্রাম সদর ‍উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ধরলা নদীপাড়ের সারডোব গ্রামের বাসিন্দা। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে তিনটি জামা গায়ে দিয়েছেন। জামার ওপর পড়েছেন একটি জ্যাকেট। জ্যাকেটের ওপর একটি কম্বল জড়িয়েছেন গায়ে। মাথায় দিয়েছেন টুপি। তারপরও তিনি ঠান্ডা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়েই খড়কুটোর আগুনের পাশে বসেছেন।

সেকেন্দার বলেন, এমন শীত তিনি গত এক যুগেও দেখেন নাই।

'অ্যাদোন জার বাহে মুই গেল একযুগেও দ্যাখোং নাই। জার যাবারই নাইকছে না। এ্যাদোন জারোত তো হামারগুলার বাঁচা দুস্কর হয়া গ্যাছে।'

তিনি বলেন, আগে ৪-৫ দিন শীতে কাঁপলেও এখন গত ১৪-১৫ দিন ধরে শীতের কাঁপন চলছে। শীত কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

সেকেন্দার আলী দিনমজুরি করে তাই দিয়ে সংসার চালান। গেল দুই সপ্তাহে মাত্র চার দিন কাজ করতে পেরেছেন। ঠান্ডার কারণে তিনি কাজের খোঁজে বাইরে যেতে পারছেন না। উপার্জন না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল ৮ জানুয়ারি থেকে ঠান্ডার প্রকোপ বেশি শুরু হয়েছে। মাঝখানে ২-৩ দিন সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও সূর্যের আলো বেশিক্ষণ ছিল না। সূর্যের আলো না থাকার কারণে ঠান্ডার দাপট বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগের বছরগুলোতে ঠান্ডার কারণে শীতার্ত গরীব ও দু:স্থ মানুষজনের কষ্ট কম হয়েছিল। অনবরত ৩-৪ দিন ঠান্ডা থাকলেও পরে দিনভর সূর্যের আলো পাওয়ায় ঠান্ডার প্রকোপ কম ছিল। এবছর অনবরত দুই সপ্তাহ ঠান্ডা চলছে। শরীরে পর্যাপ্ত গরম কাপড় জড়িয়েও ঠান্ডা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ঠান্ডার কারনে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন কমেছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পযর্বেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রোববার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকে চারদিক ঢেকে থাকছে কুয়াশায়। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তে থাকে। সূর্যের আলো না থাকায় ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের রিকশাচালক সুদর্শন দাস (৪৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে তিনি প্রতিদিন চারশ-পাঁচশ টাকা রোজগার করতেন। এখন তিনি ১৫০-২০০ টাকা রোজগার করছেন। ঠান্ডা উপেক্ষা করে রিকশা নিয়ে বাইরে গেলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ঠান্ডার কারণে লোকজন বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না। প্রয়োজনে যারা ঘরের বাইরে যাচ্ছে তারাও ঠান্ডার কারনে রিকশায় চড়ছে না।

'ঠান্ডার কারণে আমাদের কামাই কমে গেছে। রিকশা চালিয়ে যে কয় টাকা পাই তাতে সংসার চলে না। আমরা খুব কষ্টে আছি,' বলেন তিনি।

কৃড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঠান্ডা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় কৃষির জন্যও ক্ষতির কারণ হয়েছে। ঠান্ডার কারণে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। এ কারণে গম, আলু, ভুট্টা, সরিষা, বোরো বীজতলাসহ অন্যন্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ রকম ঠান্ডা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে আশানুরূপ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। কুয়াশা থেকে বোরো ধানের বীজতলা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঠান্ডার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। শীতার্ত দু:স্থ ও ছিন্নমুল মানুষের মাঝে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

10h ago