চালের দাম সহনীয় রাখতে ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিকে দৃশ্যমান অভিযানের নির্দেশ

চালের দাম সহনীয় রাখতে ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিকে দৃশ্যমান অভিযানের নির্দেশ
ছবি: সংগৃহীত

ধান ও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সব জেলার ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) একসঙ্গে দৃশ্যমান অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী—যারাই নিয়ম ভঙ্গ করবে, অভিযানে তাদের কাউকেই ছাড় না দিতে বলা হয়েছে।

তবে কোনো গৃহস্থ বাড়িতে যেন অভিযান পরিচালনা না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার 'অভ্যন্তরীণ আমন (ধান ও চাল) সংগ্রহ, বাজার মূল্য ও মজুত কার্যক্রম তদারকি' শীর্ষক দুটি ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি উপজেলায় অভিযান চালাবে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন।

খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে আট বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিসহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম দফার বৈঠকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরের বৈঠকে ছিলেন রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কর্মকর্তারা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়তে থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈঠকে খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে যেন আশপাশের এলাকায় অভিযানের খবর যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এতে অন্যান্য মজুতদার ও কালোবাজারিরা অবৈধভাবে ধান বা চাল মজুত করতে ভয় পাবে। তবে, কোনো গৃহস্থ বা কৃষকের বাড়িতে ধান মজুতের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনাকালে ডিসি ও এসপি যেন একসঙ্গে যান, সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন খাদ্যসচিব।

মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালনের নির্দেশ দেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'ধান-চালের দাম যেন হঠাৎ করে না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ের মিল মালিকদের নিয়ে ডিসিরা বৈঠক করবেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে যাদের ব্যবসার লাইসেন্স নাই, তাদের বিষয়ে তো ব্যবস্থা নেওয়া হবেই, যাদের লাইসেন্স আছে তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।'

এ সময় খাদ্যমন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'আড়তদাররা কত গাড়ি ধান কিনছে, সেই ধানের কতটা পরে বিক্রি করছে, তার সঠিক হিসাব নিতে হবে। মিল মালিকরা ধান কেনার পর সেটা ধীরে ধীরে ক্রাশিং করে বিক্রি করে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু ধান কেনা ও চাল বানিয়ে বিক্রি করার সামঞ্জস্যতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।'

'মিল মালিকরা যেন বেশিদিন ধান বা চাল গুদামে ধরে না রাখে, তাও দেখতে হবে। অর্থাৎ, তারা মিল মালিক হয়েছেন বলে ইচ্ছেমতো সময়ে ধান বা চাল জমিয়ে রেখে বেশি দামের আশায় থাকবেন, তা হবে না', বলেন মন্ত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন সরকার গঠনের আগেই আমরা জনগণের কাছে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এই সময়ে চালের বাজার অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ কারণে দায়ীদের শাস্তি পেতে হবে। তবে ভালো ব্যবসায়ীদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।'

গত বুধবারের নিজ এলাকার উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'লাইসেন্স ছাড়া ধান মজুত করায় নওগাঁর নিয়ামতপুরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মোরশেদ আলম নামের একজনকে এক লাখ টাকা এবং নেহা ট্রেডার্স নামের এক প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের গাবতলি বাজারের রাউতাড়া এলাকায় এ জরিমানা করা হয় এবং তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।'

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'দামে কারসাজি করে কোনো জায়গার ব্যবসায়ীরাই পার পাবেন না। আমি আমার এলাকাতেই প্রথমে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি।'

উল্লেখ্য, চালের দামকে কেন্দ্র করে গত বুধবার খাদ্যমন্ত্রী ঢাকায় শীর্ষ মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিনই তিনি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজন মনে করলে আগামী সপ্তাহে খাদ্যমন্ত্রী জেলা পর্যায়ে সফর শুরু করতে পারেন।

নতুন সরকার গঠনের পরপরই প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকার মনে করছে, কারণ ছাড়াই চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠকে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে আগামী রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Likely reform proposal: Govt officials may be able to retire after 15yrs

For government employees, voluntary retirement with pension benefits currently requires 25 years of service. The Public Administration Reform Commission is set to recommend lowering the requirement to 15 years.

7h ago