কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ৪৮ শতাংশ বেড়েছে: ওশি ফাউন্ডেশনের জরিপ
দেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৪৩২ জনের, যা গত বছরের ৯৬৭ জনের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক হাজার ১০৩ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ৩২৯ জন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এসএম মোর্শেদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ জন, দিনমজুর খাতে ২২০ জন, নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন, কৃষি খাতে ১৪৬ জন ও উৎপাদন খাতে ৯৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এতে আরও বলা হয়, এ বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৫০২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন, যার সংখ্যা গত বছর ছিল ২২৮।
ওশি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে অন্তত নয় হাজার ২৬৩ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্র, অনলাইন ও টেলিভিশন সূত্র, স্বেচ্ছাসেবকদের স্পট রিপোর্ট এবং ট্রেড ইউনিয়ন ও সংস্থার কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছে ওশি ফাউন্ডেশন। সেগুলো হলো—বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এ উল্লেখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগের অভাব, বিষেশত প্রশিক্ষণবিহীন চালক নিয়োগের ফলে পরিবহন খাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। একইসঙ্গে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগের অভাব, অপর্যাপ্ত শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত বয়লার পরিদর্শন ব্যবস্থা, গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহারে অনীহার এই তালিকায় রয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু রোধে ১০টি সুপারিশ করেছে ফাউন্ডেশনটি। সেগুলো হলো—
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এ উল্লেখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা।
২. পোশাক খাতের মতো অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেফটি কমিটি গঠন।
৩. কর্মক্ষেত্রে দুঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা ও আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা। এ ছাড়া আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা।
৪. শিল্প খাতের সব সেক্টরে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) চালু করা।
৫. সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডেটাবেজ তৈরি করা।
৬. কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অর্ন্তভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া।
৭. শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা।
৮. কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৯. শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা নীতিমালা, ২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা। এবং
১০. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।
Comments