‘আমরা একটা স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থার ভেতর প্রবেশ করেছি’

স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা

কারাবন্দি হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জালাল আহমদকে (৪৫) ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক এবং মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, এটা স্পষ্টতই মানবাধিকারের লঙ্ঘন, বেআইনি ও অসাংবিধানিক।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথোপকথনে এই মন্তব্য করেন তারা।

রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে থাকা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জালাল আহমদ গত সোমবার বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন রাতে তাকে চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জের আধুনিক ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে আনার সময় তাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনে কারা কর্তৃপক্ষ।

সেখানে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জালাল আহমদের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ওই যুবদল নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে সিলেটে পাঠানো হয়।

জালাল আহমদের স্বজনদের অভিযোগ, অনুরোধ করার পরও পুলিশ তার ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মতিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জালাল অসুস্থ, তবে যেকোনো সময় তিনি সুস্থ হয়ে পালিয়ে যেতে পারেন।'

'বিশ্বের বিভিন্ন স্বৈরতান্ত্রিক ও আধা-স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোতেও পুলিশের আচরণ একই রকম হয়ে থাকে। (এই দেশগুলোতে) বিরোধী রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের এমন অপব্যবহার ও এর মাধ্যমে তাদের জেলে ঢোকানোর এই প্রবণতাও মোটামুটি একই রকম।'

এ বিষয়ে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, 'কেউ যদি বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন, যদি জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য কারো ফাঁসির আদেশ হয়ে থাকে, তাহলে ব্যতিক্রমভাবে হয়তো ডান্ডাবেড়ি পরানোর কিছুটা যৌক্তিকতা আছে। এর বাইরে এটার কোনো আইনি কিংবা সাংবিধানিক ন্যায্যতা নেই। এটা পরিষ্কার।'

এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনে করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্যাতনের ভেতর দিয়ে অভিযুক্তকে ভয় দেখানোর জন্যই ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। 'অবশ্যই এখন পুলিশ কিংবা বেশিরভাগ পুলিশ আইনি জবাবদিহির ধার ধারেন না। সুতরাং আইনগতভাবে যেটা হওয়া উচিত, তা না করে তাদের মধ্যে যা খুশি তাই করার একটা ঝোঁক থাকে।'

শাহদীন মালিক আরও বলেন, 'আমরা বলতেই পারি যে আমরা একটা স্বৈরতান্ত্রিক অথবা আধা-স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থার ভেতর প্রবেশ করেছি। আর পুলিশ তেমন আচরণই করছে।'

'বিশ্বের বিভিন্ন স্বৈরতান্ত্রিক ও আধা-স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোতেও পুলিশের আচরণ একই রকম হয়ে থাকে' বলে উল্লেখ করে শাহদীন মালিক বলেন, '(এই দেশগুলোতে) বিরোধী রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের এমন অপব্যবহার ও এর মাধ্যমে তাদের জেলে ঢোকানোর এই প্রবণতাও মোটামুটি একই রকম।'

এর আগে গত মাসের শেষের দিকে যশোরে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার জেলা যুবদলের সহসভাপতি আমিনুর রহমানকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পেশায় কলেজশিক্ষক ওই যুবদল নেতা কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আমিনুরের স্বজনরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের শয্যায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খাওয়ার সময়েও তার হাতকড়া খোলা হয়নি। এমনকি স্বজনদের সঙ্গেও তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, 'আমরা অনেক আগে এটা (ডান্ডাবেড়ি) নিয়ে একটা মামলা করেছিলাম। তখন মইনুল ইসলাম চৌধুরী চিফ জাস্টিস ছিলেন। আমরা আবেদন করেছিলাম, ডান্ডাবেড়ি পরানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি কেবল ওই ব্যক্তির জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।'

এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি সম্পর্কে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে সুলতানা কামাল আরও বলেন, 'বারবারই এটা যখন আমরা আদালতের নোটিশে এনেছি, তখন কেস বাই কেস বলা হয়েছে যে ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না।'

তিনি বলেন, 'এর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে কি না, অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি না সেটাও তো আমরা জানি না। ডান্ডাবেড়ি পরানো বেআইনি, অসাংবিধানিক ও অমানবিক।'

গত বছরের ডিসেম্বরে ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজীপুরের বিএনপি নেতা আলী আজম এবং শরীয়তপুরে ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজাকে প্যারোলে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তারা ডান্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় তাদের মায়ের জানাজায় অংশ নেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'যে প্রবণতা এখানে দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝা যায়, বিরোধী দলের কর্মীদের কিংবা বিরোধী দলের যারা সমর্থক তাদের ক্ষেত্রেই এটা ঘটছে। এতে মানুষ ধারণা করে নিতে পারে যে বিরোধী দলকে ভয় দেখাতেই এটা করা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands. 

2h ago