স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে তালগোল, সারাদিন নাটোরে যা ঘটল

সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার অপেক্ষা করেন নাটোর সদর উপজেলার হেলিপ্যাড মাঠে (বামে)। কিন্তু মন্ত্রী নামেন উত্তরা গণভবনের হেলিপ্যাডে। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের তিন সংসদ সদস্য, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি, র‍্যাবের অধিনায়ক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী, মন্ত্রীর প্রটোকলের গাড়ি, নিরাপত্তা বাহিনীর সুসজ্জিত কর্মীরা অপেক্ষা করছেন উপজেলার হেলিপ্যাড মাঠে। 

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে বহনকারী হেলিকপ্টার সেখানে না নেমে চলে গেল আধা কিলোমিটার দূরে দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনের হেলিপ্যাডে। 

হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে নাটোরের প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা। উপজেলা হেলিপ্যাড থেকে সবাই আবার তাড়াহুড়ো করে উত্তরা গণভবনে গিয়ে উপস্থিত হন। 

বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে নাটোর শহরে।

উপজেলা হেলিপ্যাড মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপেক্ষায় নাটোরের তিন সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিআইজি স্যারসহ আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম ফুলবাগান এলাকায় উপজেলা হেলিপ্যাড মাঠে। হেলিকপ্টারও আসতে দেখলাম। আমারা মনে করলাম হেলিকপ্টার নামার আগে তো একটু চক্কর দেয়, তেমনই মনে হয় ঘুরছে। তারপর দেখি শব্দ নাই। খোঁজ নিতেই জানি দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনে নেমেছেন মাননীয় মন্ত্রী।'

'সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই ছুটে গেলাম সেখানে। বিশৃঙ্খল একটা অবস্থা তৈরি হলো। পরে সেখান থেকে নির্ধারিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,' যোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ অপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মন্ত্রীর নামার কথা ছিল সদর উপজেলা হেলিপ্যাডে। কিন্তু হেলিকপ্টারটি ভুল করে উত্তরা গণভবনের হেলিপ্যাডে নামে। একটি বেসরকারি (মেঘনা গ্রুপের) কোম্পানির হেলিকপ্টার ছিল সেটি।'

নাটোরের সার্কিট হাউজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। ছবি: সংগৃহীত

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'মন্ত্রীকে ভুলের বিষয়টি বলা হয় এবং হেলিকপ্টার চালু করে নির্ধারিত স্থানে যাবেন কি না জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রী নিষেধ করেন।' 

'আবার হেলিকপ্টার চালু করে নির্ধারিত স্থানে অবতরণ করার আগেই সবাই সেখানে চলে আসতে পারবেন বিবেচনায় মন্ত্রী পাইলটকে নিষেধ করেন,' যোগ করেন তিনি।

এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যান পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। সেখানে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি ও মুজিব কর্নার উদ্বোধন করেন। 

সেখান থেকে সার্কিট হাউজে গার্ড অব অনার গ্রহণ করে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আর সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে।

সেখান থেকে বিকেলে নাটোর শহরের কানাইখালীতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। 

শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করায় মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ছবি: সংগৃহীত

শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ করে এ সমাবেশ আয়োজন করায় মানুষকেও পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। 

শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নাটোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু আর সঞ্চালনা করেন একই শাখার সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম। 

তবে উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য সিনিয়র নেতারা। তবে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দলীয় অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিত না থাকা নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের আমন্ত্রণ জানায়নি। মন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম, কিন্তু দলীয় অনুষ্ঠানে যাইনি।'

'আমন্ত্রণ না জানানো দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমরা জেলা আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।'

তবে এ অভিযোগ বিষয়টি অস্বীকার করে নাটোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমি নিজে তাদের দাওয়াত দিয়েছি।'

এ বিষয়ে মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় সংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের একটি দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন মন্ত্রী। সেখানে দাওয়াত নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
 Al Bakhera killings Al Bakhera killings

Killings in Chandpur: Water transport workers go on strike

Water transport workers has started an indefinite strike from midnight

5h ago