৩ মাসের বেতন বকেয়া, ‘বিপদে’ রাজবাড়ী গার্মেন্টসের শ্রমিকরা

রাজবাড়ী গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিক রেহানা বেগম। ছবি: স্টার

'আমার দুই মেয়ে-এক ছেলে। স্বামী মারা গেছে। বেতন মাসে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। তিন মাসের বেতন বকেয়া। বাসা ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা বের করে দিয়েছে। ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে আজ তিন দিন ধরে বাসার। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে থাকছি। নিজের বাসায় যেতে পারি না। এক কাপড়ে আছি। মালিক শুধু বলছে, বেতন দেবে। কবে-কখন দেবে, তা বলে না। বেতন দেওয়ার সময় তার হয় না। কেন আমি গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছিলাম?'

কান্নজড়িত কণ্ঠে আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় রাজবাড়ী গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিক রেহানা বেগম (৫৫)।

তুরাগ থানার আওতাধীন রানা ভুলা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী রেহানা গাজীপুরের বাসন সড়কের একটি বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

আজ দুপুরে গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গেট থেকে তিনি বলেন, 'আমার যখন চাকরি দরকার, এখানে নতুন একটা কারখানা চালু হইছে শুইনা আমি গেছি। মালিক নিজে আমার ইন্টারভিউ নিছে। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় বলেছে, বেতন প্রতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে দেওয়া হবে। আমি ও আমার সহকর্মীদের এ কথা বলে কাজ দিছে। জুলাইয়ে কারখানায় অনেক কাজ আসছে। মাস চলে গেছে। ১৫ আগস্ট গিয়ে বললাম, স্যার মাস শেষ, বেতন দেন। তিনি আমাদেরকে বললেন, "আজকে দিতে পারব না, ২০ তারিখে দেবো"।

২০ আগস্ট স্যারের সঙ্গে দেখা করি। দেখা করার পর বলল, "আমার কাজের চাপ। এই কাজটা শেষ করো। শেষ করলে বেতন দেওয়া হবে"। কাজ শেষ হওয়ার পর বলল, "শিপমেন্ট হলে বেতন দেওয়া হবে"। শিপমেন্টের সময় দিন-রাত কাজ করছি। সারারাত না খেয়ে কাজ করছি। শিপমেন্ট ৩ সেপ্টেম্বর চলে গেছে, তাও টাকা দেয় নাই। কিন্তু যারা কাপড় কিনে নিছে, আমরা শুনেছি, তারা টাকা পরিশোধ করছে। কিন্তু এরপরেও আমাদের বেতন দেয় নাই।'

রেহানা আরও বলেন, 'আজ তিন মাস ধরে দিবে দিবে বলছে, কিন্তু দেয় নাই। সবশেষে বলল, ২ বা ৩ অক্টোবর দিবে। তা দেয় নাই। ৫ অক্টোবর বেতনের জন্য যাওয়ার পর বলেছে, কয়টা দিন অপেক্ষা করতে। আমরা বলছি, স্যার আমরা খাইতে পারি না। পেটের ক্ষুধা আর কত ধরে রাখব। ক্ষুধার যন্ত্রণা অনেক। আমরা আর পারতাছি না। তাও দেয় নাই। আমি বলেছি, আমার বাড়িওয়ালারা ভাড়া না দিলে মানে না। আমাকে বের করে দিবে। তারপরেও তিনি কোনো কথা শুনলেন না। বেতন দিলেন না। গত তিন দিন আগে বাড়িওয়ালা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিছে।'

একই গার্মেন্টসের পোশাকশ্রমিক জাকিয়া, সোনিয়া ও খাদিজা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই তিন মাসের বেতন, ওভারটাইম ও নাইট বিল বকেয়া আছে। তরা তিনজন যথাক্রমে ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট ও শরীয়তপুর থেকে এসে চাকরি নিয়ে এখন বিপদে আছেন।

কারখানা আরেক শ্রমিক ছাইফুল ইসলাম বলেন, 'আজ সকালে সব বকেয়া বেতন ও ওভারটাইমের টাকা পরিশোধ করতে আবেদন করেছি।'

শ্রমিক নেতা আজিজুল ইসলাম বলেন, 'মালিক বকেয়া পরিশোধ করবে বলেও করছে না।'

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী গার্মেন্টস লিমিটেডের মালিক রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকেরা আমার কাছে কিছু বকেয়া বেতন পাবে। আলোচনা চলছে। আগামী ২২ অক্টোবর বসব। শ্রমিকেরা ঠিকমতো কাজ করছে না।'

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. মোতালেব মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইন অনুযায়ী রাজবাড়ী গার্মেন্টসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর উভয় পক্ষের সঙ্গে বসব। আজ শ্রমিকেরা এসেছিলেন। রোববার মালিক ও শ্রমিক—উভয় পক্ষই থাকবে। বেতন পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Crimes against humanity: trial against Hasina begins at ICT

Co-accused in the case are former home minister Asaduzzaman Khan Kamal and former IGP Abdullah Al-Mamun

40m ago