আ. লীগ সরকারে এসেছে বলে এদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলে এদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। এক ভদ্রলোক, হ্যাঁ বিশ্বজুড়ে নাম রয়েছে তার। কিন্তু সামান্য একটা ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার কারণে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়ে দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার পক্ষে। সেদিন বলেছিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করব, আমরা তা করে দেখিয়েছি। ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, 'বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।' এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, আজকে যারা ভোটের কথা বলে, অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে, আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলে এদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোঁয়া তোলে, আর প্রতিদিন আমাদের ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে একটা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত থেকে এবং ভোট চুরি করা ছাড়া কোনোদিন ক্ষমতায় আসে নাই। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট, ২০ দলীয় জোট ৩০০ সিটে পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। তারপর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট, নির্বাচন নিয়ে খেলা, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করা, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা—এই ধ্বংসযজ্ঞে মেতে আছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাঙালি জাতিকে আমি আহ্বান করব, বাঙালি জাতির ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশ আমাদের। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশে এগিয়ে যাবে, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গর্ভমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি—এই আমরা গড়ে তুলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরাই প্রথম এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কর্মসূচি নেই, তার সুফল আজ দেশবাসী পাচ্ছে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন আমরা যমুনা নদীর ওপর প্রথম সড়ক ও রেলসহ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধন করি। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি ২০০৮ সালের নির্বাচনে, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তখন রেলকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হিসেবে ঘোষণা দেই। আলাদা মন্ত্রণালয় করে, রেল যোগাযোগ যাতে বাংলাদেশে আরও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠে, তার পদক্ষেপ নেই। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যে রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল, সেগুলো উন্মুক্ত করে দিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমরা পদক্ষেপ নেই।

তিনি আরও বলেন, সেই সঙ্গে গত সাড়ে ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, সেই রূপকল্প ২১ আমরা বাস্তবায়ন করে আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এই সাড়ে ১৪ বছরে আমরা ৮২৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, ২৮০ কিলোমিটার মিটার গেজ ও ব্রডওয়ে ডুয়েল গেজ, এক হাজার ১৯১ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ এবং একই সময়ে এক হাজার ৩৬টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ৪৯৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন বা পুনর্নির্মাণ এবং ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ২৩৭টি স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণ করেছি।

'তা ছাড়া আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-ভাঙ্গা-মাওয়া মহাসড়কসহ ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছি। ১০ হাজার ৮১০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। রেলের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পর্যন্ত লোকোমোটিভ ৬৫৮টি, যাত্রীবাহী ক্যারেজ ৫১৬টি, মালবাহী ওয়াগন ৫০টি, লাগেজ ভ্যানসহ রেলওয়েতে সংযুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন রুটে ১৪৩টি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। ১৩৪টি স্টেশনে সিগনালিং ব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা হয়েছে। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। ডুয়েল গেজ, ব্রড গেজ—এই ধরনের রেললাইন আমরা তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে আমাদের রেল গতিশীল হয়, পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে আরও সক্ষমতা অর্জন করে। ভবিষ্যতে আরও ৪৬টি নতুন ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ৪৬০টি নতুন ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ২০০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ, এক হাজার ৩১০টি নতুন ওয়াগন সংগ্রহেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি ৩-৪ বছরের মধ্যে সারা বাংলাদেশে রেলওয়ে যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Likely reform proposal: Govt officials may be able to retire after 15yrs

For government employees, voluntary retirement with pension benefits currently requires 25 years of service. The Public Administration Reform Commission is set to recommend lowering the requirement to 15 years.

7h ago