আশ্রয়ণ প্রকল্প: অনেকে ভালো নেই, অনেকে ছেড়েছেন ঘর

আশ্রয়ণের ঘরগুলোর অর্ধেক পানিতে ডুবে আছে। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

ঘর ছিল না, ঘর পেয়েছিলেন। সেখানে বছরের বাকি সময় থাকতে পারলেও বর্ষায় থাকতে পারেন না বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদিপা-পলিপাড়ায় উপহার হিসেবে মুজিববর্ষের ঘর পাওয়া ৯টি পরিবার।

গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণের ঘরগুলোর অর্ধেক পানিতে ডুবে আছে। সেখানে যাওয়ার রাস্তা পানির নিচে। গত চার দিন এমন জলমগ্ন অবস্থা থাকায় নয়টি পরিবারের সবাই এসব ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয় এই নয়টি ঘর।

জলমগ্ন প্রকল্প এলাকা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

এখানে ঘর পেয়েছেন বুলবুল (৩৮) ও তার স্ত্রী হেলেনা (৩০)। গতকাল বিকেলে টেলিফোনে কথা হয় হেলেনার সঙ্গে। তিনি তার মায়ের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন, যিনি থাকেন অপর একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

হেলেনা বলেন, 'বর্ষা এলে আমাদের ঘরগুলোতে আর কেউ থাকতে পারে না। এই এলাকা আগে বিল ছিল। পরে মাটি কেটে আশ্রয়ণের ঘর তৈরি করেছে। এখন বর্ষায় একটু বেশি পানি হলেই আর ঘরে থাকা যায় না, পানি ঘরের মধ্যে চলে আসে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার পানি ঘরে ঢুকেছে। আমরা নয়টি পরিবারের সবাই আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।'

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন (৩৫) বলেন, 'এই এলাকাটা নিচু। বর্ষায় অনেক পানি জমে। তখন আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে কেউ থাকতে পারে না। আমরা এখানে মাছ ধরি। এই ঘরগুলো তৈরির সময়ও সবাই প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু সরকারি লোক আমাদের কথা শোনেনি।'

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে, মাটি কেটে বারান্দা উঁচু করে দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু এখন সারা দেশেই অধিক বৃষ্টিতে একটা বিপর্যয় হয়েছে। আশ্রয়ণের ঘরেই সবাই থাকেন, কিন্তু পানি ওঠার কারণে বর্তমানে সবাই আত্মীয়দের বাড়ি গিয়ে উঠেছেন।'

সম্প্রতি একই উপজেলার বামুনিয়া গ্রামে আরও ১৫টি পরিবারকে মুজিববর্ষের ঘর উপহার দিয়েছে শাজাহানপুর উপজেলা প্রশাসন।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানেও হাঁটু পানি। ঘরে পানি না ঢুকলেও ভালো রাস্তা না থাকায় চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে বাসিন্দাদের।

এখানে ঘর পাওয়া ফাতেমা বেগম (৩০) বলেন, 'ঘর পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভালো নেই। গত তিন-চার দিন হয়েছে ১৫টি ঘরেই বৃষ্টির পানি ওঠে। মূল রাস্তায় ওঠার জন্য আমাদের কোনো রাস্তা নেই। পানিতে ভিজতে ভিজতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে।'

আলমগীর হোসেন (২৮) বলেন, 'আমাদের সঙ্গে এখানে ছয় জন প্রতিবন্ধী এবং দুজন বিধবাও ঘর পেয়েছেন। কিন্তু ঘরগুলো এত নিচু জমিতে যে এখন পানি জমে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।'

নাসিমা বেগম (৫০) বলেন, '১৫টি পরিবারের জন্য মাত্র দুটি টিউবওয়েল। সকালে পানি নিতে হয় লাইন ধরে। এখানে পানি জমলে বের হওয়ার জায়গা নেই। পাশের জমিওয়ালা পানি যেতে দেয় না।'

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও সাইদা খানম বলেন, 'এই ঘরগুলো পাকা রাস্তার সঙ্গেই বানানো হয়েছে। তাছাড়া এটা তেমন নিচু জমিও নয়। অতিরিক্ত পানির কারণে বারান্দার নিচে পানি আসলেও ঘরে উঠেনি।'

মাটি কেটে এই প্রকল্প এলাকা উঁচু করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে সাইদা খানম বলেন, 'আপাতত এমন কোনো পরিকল্প নেই। তাছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই তো আর উঁচু করার ব্যবস্থা করা যায় না।'

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, এখানে প্রতিটি পরিবারের জন্য দুই কক্ষের একটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

43m ago