‘প্রস্তাবিত সাইবার আইনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ইচ্ছামতো অপরাধ বিবেচনার সুযোগ আছে’
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও চর্চার আলোকে এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা বিল ঢেলে সাজাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিসহ সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বিলটি যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো চিন্তা, বিবেক, বাক, মত ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যদের জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি কার্যপত্র দিয়েছে সংস্থাটি।
কার্যপত্রের সঙ্গে পাঠানো এক বার্তায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'ডিএসএ রহিত করে এর পরিবর্তে প্রস্তাবিত সিএসএ ২০২৩ প্রণয়ন করার সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে যে, ডিএসএর ব্যবহার ও অপব্যবহারের মাধ্যমে বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো বিভিন্ন মৌলিক মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন হয়েছে। এর ফলে জনমনে যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি হয়েছে, সরকার তা অবসানের বাধ্যবাধকতার যথার্থতা উপলব্ধি করেছে।'
তিনি বলেন, 'একইসঙ্গে যৌক্তিকভাবে মানুষের মধ্যে এমন প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে যে, যেসব কারণে ডিএসএ রহিত করা হচ্ছে, সিএসএতে সেসব উপাদান থাকবে না এবং এর পরিধি ও উদ্দেশ্য হবে সুনির্দিষ্টভাবে সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা এবং এসবের অবাধ ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো তৈরি করা।'
এ ক্ষেত্রে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক কার্যপত্রটিতে উপস্থাপিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে খসড়া সিএসএ বিল ২০২৩ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি ও সব সংসদ সদস্যদের ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, 'খসড়া সিএসএ বিল ২০২৩'-এ ডেটা ও তথ্য অপসারণে বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবারিত ক্ষমতা এবং অনেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার পরিবর্তে ডিএসএ ২০১৮ এর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণার ওপর ভরসা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিধান রাখা হয়েছে।
ডিএসএর সব নিবর্তনমূলক উপাদানসহ এর বেশিরভাগ ধারাই সিএসএতে হুবহু প্রতিস্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, ক্ষতিকর কন্টেন্ট অপসারণ করার প্রয়োজন আছে, তবে তা সীমিত পরিধির মধ্যে থাকতে হবে এবং বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিকাল রাইটসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, সর্বোপরি প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে মতপ্রকাশ, ভিন্নমত, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা চর্চা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
টিআইবি বলছে, এই বিলে দক্ষতা ও সক্ষমতাকে বিবেচনা না করে এবং বিচারিক নজরদারি ব্যতিরেকে অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিচারিক নজরদারির যে সক্ষমতা দরকার, তা আছে কি না বিবেচনা করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে কারাদণ্ড বাদ দিয়ে অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, যা বাস্তবে যে কৌশলে সাংবিধানিক অধিকারকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করা, তা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চার কারণে মানহানির মতো অভিযোগের প্রচলিত আইনে বিচার করা সম্ভব, এমন অনেক বিষয় অযৌক্তিকভাবে এই বিলের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা আইনের জন্য অপরিহার্য অনেক উপাদান এই খসড়ায় নেই, এমন বেশ কিছু বিষয় সংশোধিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করছে টিআইবি।
সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে খসড়া সিএসএ বিল ২০২৩ ঢেলে সাজাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় টিআইবি।
একইসঙ্গে কার্যপত্রে উপস্থাপিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশের ব্যাপারে কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উভয়পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে আলোচনা করতেও আগ্রহ প্রকাশ করছে সংস্থাটি।
Comments