বৃষ্টি থামলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে

বৃষ্টি থামলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে
সাতবাড়িয়ায় সড়কের উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়তে দেখা গেছে। ছবি: স্টার

সকাল থেকে বৃষ্টি থামলেও স্বাভাবিক হয়নি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল। মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের।

আজ বুধবার সকালে সাতবাড়িয়ায় সড়কের উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়তে দেখা গেছে। 

রাজশাহী শহরের মেডিনোভা ডায়গনস্টিক সেন্টারের ৪০ জন স্টাফ কক্সবাজারে পিকনিক যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল রওয়ানা হয়ে আজ ভোর থেকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়ায় ৩ ঘণ্টা ধরে আটকে ছিলেন জ্যামে।

ডায়গনস্টিক সেন্টারের স্টাফ সাজু আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সড়কের ওপর যে পানি জমে আছে, তা জানতেন না। তিনি বলেন, 'এখন কী করব, বুঝতে পারছি না। কতক্ষণে কক্সবাজার পৌঁছাতে পারব জানি না।'

চন্দনাইশ থানার সাব ইন্সপেক্টর আজয় দাশকে দেখা যায় সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে। তিনি বলেন, 'সড়কের এক পাশ দিয়ে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে।' 

তবে এই প্রতিবেদক সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ওই জায়গায় থেকে কোনো গাড়িকে সামনে এগুতে দেখেননি। 

সকালে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। লোকজন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। আনেকে গবাদি পশু নিয়ে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

সাতবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২ শতাধিক মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় সাদেক পাড়ার জেবর হোসেন সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন এই স্কুলে।
তিনি বলেন, 'পরশু রাত থেকে বাড়িতে পানি ঢুকেছে। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে স্কুলে।'

তিনি আরও জানান, এই ২ দিনে একাকার কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের দেখতে যাননি। জোটেনি কোনো সাহায্য। স্থানীয় আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দুপুরে খিচুড়ি ও রাতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সকালে সবাই নাস্তা কিনে খেয়েছেন দোকান থেকে। 

খানদীঘি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও প্রায় ২ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় নাথ পাড়া থেকে পরিবার নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন অজিত দেবনাথ, দারিকা মোহন দেবনাথ, দুলাল নাথ, মানিক নাথ প্রমুখ।
 
তারা জানান, এই পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের দেখতে আসেননি। স্থানীয় বিত্তশালী লোকজন শুকনো খাবার দিচ্ছেন ৩ বেলা। তা খেয়েই বেঁচে আছেন।

এলাকার প্রায় ৫০টি পুকুর পানিতে ডুবে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বৃষ্টির পানিতে। তলিয়ে গেছে কয়েকশত হেক্টর জমির বীজতলা।

পূর্ব সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক বাদশা মিয়া ৪০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। তার সব বীজতলাই নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান।
 
নজরুল ইসলাম ৮০ শতক জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছিলেন। আগামী মাসে ফসল কাটার কথা ছিল। তিনি বলেন, 'বন্যার পানিতে আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।' তিনি বরগা চাষি। এখন কীভাবে চাষের খরচ তুলবেন চিন্তায় আছেন।

সাদেক পাড়া থেকে আরেকটু এগিয়ে দেখা যায় লোকজন রাস্তায় জমে থাকা পানিতে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। জানতে চাইলে স্থানীয় রুবেল সিকদার বলেন, 'কী করব? বাড়ির পুকুরটা ডুবে গিয়ে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। তাই জাল ফেলে কিছু মাছ ধরতে পারি কি না দেখছি।'

চন্দনাইশের স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। স্থানীয় স্কুল-কলেজগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

54m ago