রোহিঙ্গাদের নিজেদের গ্রামেই ফেরত নিতে পারে মিয়ানমার

চীনের বিশেষ দূতের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ইঙ্গিত
রোহিঙ্গা
নিজ দেশ মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

মিয়ানমারের উত্তর মংডু ও কাছাকাছি এলাকায় ক্যাম্প বা মডেল ভিলেজে নয়, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের গ্রামেই ফেরত নেওয়া হতে পারে।

গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠককালে চীনের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দেং সিজুন বাংলাদেশকে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

সিজুন বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য দিক নিয়ে আলোচনা করলেও মূল এজেন্ডা ছিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

গত রোববার ঢাকায় আসার আগে তিনি মিয়ানমারে গিয়েছিলেন। গত ২৮ জুলাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে তিনি মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহায়তামন্ত্রী কো কো হ্লাইং ও স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল ইউনিয়নের সদস্য এবং জাতীয় সংহতি ও শান্তি নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ার পায়ের সঙ্গে আলোচনা করেন।

২০১৭ সালে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সিজুন ঢাকা সফরে এসে মোমেনের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক করেছিলেন।

রোহিঙ্গা
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

নির্ভরযোগ্য সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, চীনের বিশেষ দূত বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বলেছেন, মিয়ানমার ইঙ্গিত দিয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের কোনো ক্যাম্প বা মডেল ভিলেজে নেওয়া হবে না।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বসবাস উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে কি না তা দেখতে গত মে মাসে রোহিঙ্গাদের একটি দল প্রথমবারের মতো রাখাইন রাজ্যে যায়। কক্সবাজারের ক্যাম্পে ফেরার পর তাদের কেউ কেউ মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নন বলে জানান।

তারা নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে তাদের আদি গ্রামে ফিরে যাওয়ার দাবি জানান। তবে কেউ কেউ ফিরে যেতে রাজি হয়েছিলেন।

রোহিঙ্গাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারও চীনের কাছে কিছু দাবি উত্থাপন করে। সেগুলো হলো—রোহিঙ্গাদের নিজেদের গ্রামে নিয়ে যেতে হবে এবং প্রত্যাবাসন হতে হবে পরিবারের সব সদস্যদের একসঙ্গে।

এছাড়া, সেখানে তাদের জীবিকা, শিক্ষা ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

'আমরা দীর্ঘদিন ধরে চীনের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করছি। এবারো আমরা চীনের বিশেষ দূতের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি,' গতকাল মঙ্গলবার রাতে ডেইলি স্টারকে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের গ্রামেই নিয়ে যাবে তা চীনের রাষ্ট্রদূত স্পষ্ট করেছেন কি না—সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করে কিছু বলেননি।

'আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের সব গ্রাম ধ্বংস করা হয়নি। অনেকগুলো এখনো আছে। সুতরাং, তাদের সেখানে নেওয়া উচিত,' বলেন মোমেন।

একটি সূত্র ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে যে, বৈঠকে চীনের বিশেষ দূত জানিয়েছেন, মিয়ানমার প্রথম ৩ মাসের জন্য প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের ব্যয় বহন করবে।

পাশাপাশি, প্রত্যাবাসনের পর জীবিকার জন্য রোহিঙ্গাদের মাছ ধরা ও কৃষি কাজের সুযোগ দেওয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বৈঠকে সিজুন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, বর্ষা মৌসুমের পরেই এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'এখনো কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।'

বাংলাদেশ সরকার চীনা বিশেষ দূতকে জানিয়েছে, বর্ষাকালে প্রত্যাবাসন শুরু করা কঠিন, তবে এর মধ্যেই প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি শেষ করা হবে।

মোমেন আরও বলেন, 'দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত। তারা এখানে কষ্ট পাচ্ছে। দুঃখজনক, অনেকেই তাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছেন।'

তার মতে, অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের বিশাল ঘাটতি আছে এবং কেবলমাত্র তাদের বাড়িতে ফিরে গেলেই তারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন।

'রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা কোনো ভূ-রাজনীতি চাই না,' যোগ করেন মোমেন।

Comments

The Daily Star  | English
Adani warns PDB to clear outstanding bills

Bangladesh seeks full power supply restoration from Adani plant

Adani halved supply to Bangladesh on October 31 due to payment delays

53m ago