ফরিদপুর

পিচঢালাইয়ের ১ সপ্তাহ পর সড়কের বিভিন্ন স্থানে ধস

পিচঢালাইয়ের ১ সপ্তাহ পর সড়কের বিভিন্ন স্থানে ধস
ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

পিচঢালাই শেষে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ধসে গেছে সড়কের বিভিন্ন জায়গা। ফরিদপুর সদরের চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের মমিনখার হাট এলাকার আইজদ্দিন মৃধার ডাঙ্গী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। 

৮০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৩ মিটার প্রস্থের সড়কটির অন্তত ৮টি জায়গা ধসে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ সড়কটির নির্মাণ কাজে অনিয়মের জন্য ধসে পড়ার ঘটনা ঘটছে।

ওই গ্রামের ডাবল সেতু এলাকা থেকে শুরু করে আফজাল মণ্ডলের হাট হয়ে বালু ধূম পর্যন্ত চলে গেছে ২ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি। এর ৮০০ মিটার অংশ নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। 

সড়কটির একপাশে খাল ও অন্য পাশে চাষের জমি। সড়কের যে দিকে পুকুর সেই দিকে ধসের গভীরতা বেশি। দেখা গেছে, আলগা বালু ও মাটির কারণে সড়কের ইটগুলো খসে খসে পড়ছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, আগে সেখানে ইট বিছানো পায়ে চলার পথ ছিল। সেটি বড় করে পিচ ঢালাই করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ার কারণে এক সপ্তাহের মধ্যেই সড়কটির অন্তত ৮টি জায়গা ধসে গেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ইমরান মাতুব্বর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সড়ক নির্মাণ কাজ খুব নিম্নমানের হয়েছে। কোনো রকমে ডইলা কাজ শেষ করা হয়েছে। সড়কের মাটি রোলার দিয়ে দাবানো হয়নাই। কোদাল দিয়া সমান কইরা পাড়াইয়া বসানো হইছে।' 

মেহেদী হাসান নামের আরেক বাসিন্দা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ইট বিছানো যে রাস্তা ছিল তার থেকে নিচু কইরা এ রাস্তা করা হইছে। রাস্তা সমান না করে উচু-নিচু করে যেনতেন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলের বৃষ্টির জন্য পানি জইমা রাস্তার বিভিন্ন জায়গা ধইসা গেছে।'

এলাকাবাসী জানায়, গত ২১ জুন এ সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়। এর ৯ দিনের মধ্যে গত ৩০ জুন থেকে ওই সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়তে থাকে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির উদ্যোগে এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সড়কটির নির্মাণ ও সংস্কার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ২২৮ টাকা। ৪ বছর আগে কাজটি যখন হাতে নেওয়া হয় তখন এর ঠিকাদার নির্বাচিত হয়েছিলেন ফরিদপুরের আলোচিত ২ ভায়ের একজন ইমতিয়াজ হাসান রুবেল। 

২০২০ সালের ৭ জুন আলোচিত ওই ২ ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছর নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে কাজটি পান ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. জামাল।

চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুহিন মণ্ডল বলেন, 'শুরুতে আমি বলে আসছিলাম এ রাস্তা টিকবে না। সরু একটি রাস্তা ওপর থেকে কেটে সেই মাটি পাশে দিয়ে চওড়া করা হয়েছে। তবে এলজিইডির কাজ এলজিইডির কর্মকর্তারাই দেখভাল করেন। আমাদের কথা সেখানে ধোপে টেকে না। তারপরও একাধিকবার এ বিষয়টি বলেছি কিন্তু আমাদের কথায় কান দেওয়া হয়নি।'

জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সাব-ঠিকাদার হিসেবে এ কাজটি বাস্তবায়ন করেছে সদরের ডিক্রিরচর মহল্লার বাসিন্দা মজিবর রহমান। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাজটি রুবেল বরকতের সময়ে করার কথা ছিল। তারা কাজ না করায় চলতি বছর নতুন করে টেন্ডার হয়। কাজটি পেয়েছেন ফরিদপুরের জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সত্ত্বাধীকারী মো. জামাল। তিনি তার পক্ষে এ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন।'

মজিবর রহমান বলেন, 'কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। এলজিইডির প্রকৌশলীরা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ বুঝে নিয়েছেন।' 

তিনি বলেন, 'এ কাজে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, তারপরও কাজ করতে হচ্ছে।'

নিম্নমানের কাজ এবং রাস্তা উঁচু-নিচু ঠিক করা হয়নি; এ অভিযোগ তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেন, 'যে ক্ষতি হয়েছে তা অতিবৃষ্টির জন্য।' 

তিনি বলেন, 'দ্রুত ভেঙে যাওয়া জায়গাগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। নির্মাণের পর এক বছর সড়কটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকে। তাই কাজ না করে বিল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত এলজিইডি ফরিদপুরের সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ সমস্যা বৃষ্টির কারণে হয়েছে। পাশাপাশি মাটি বালুযুক্ত হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।' 

ওই সড়কের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সড়কের ধসে পড়া অংশ মেরামত না করে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না। সব কাজ ঠিক ঠাক বুঝে নেওয়ার পরই বিল ছাড় দেওয়া হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

6h ago