রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) ২০১৩ সালের ২৬ জুন একটি ওষুধ উৎপাদন যন্ত্র কেনে। কিন্তু পরবর্তী ৭ বছরে যন্ত্রটি ব্যবহার তো দূরের কথা, খোলাই হয়নি। এরপর যখন যন্ত্রটি খোলা হয়, তখন দেখা যায় তা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

গত রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানির এই অবহেলার জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

সিএজি তাদের প্রতিবেদনে একে 'গুরুতর অবহেলা' হিসেবে উল্লেখ করেছে।

সিএজির নিরীক্ষকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইডিসিএল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ওই মেশিনটির পরীক্ষামূলক কাজ চলছিল এবং মেশিনটির আউটপুট ছিল ৯৫ শতাংশ। তবে কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ দেখাতে না পারায় ইডিসিএলের এই দাবি গ্রহণ করেনি সিএজি নিরীক্ষকরা।

এ ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছিল সিএজির নিরীক্ষকরা। তবে গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিঠির কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে বিতর্কিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

নিরীক্ষকরা আরও ৬টি আর্থিক অনিয়মের ঘটনা খুঁজে পেয়েছে, যার ফলে কোম্পানিটি শুধু ২০১৯-২০ অর্থবছরেই প্রায় ৩২ কোটি টাকার ক্ষতি করেছে।

অনিয়মগুলোর মধ্যে একটি হলো মহামারিকালে ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক মেরোপেনেম তৈরিতে ব্যর্থতা। তখন এই ওষুধটির ব্যাপক চাহিদা ছিল।

ইডিসিএল কর্তৃপক্ষ কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কাঁচামাল সংগ্রহের দরপত্র ৩ বার বাতিল করে এবং যেসব সরকারি হাসপাতালগুলো অ্যান্টিবায়োটিক চেয়েছিল, তাদেরকে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানি থেকে তা সংগ্রহ করার পরামর্শ দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি যদি দ্বিতীয় দরপত্রের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করে ওষুধ তৈরি করত, তাহলে তারা ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লাভ করত।

অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে ইডিসিএল কর্তৃপক্ষ সিএজিকে জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচলিত কাঁচামালের উদ্ধৃত দরের চেয়ে দরপত্রের মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বলে টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করেছে ক্রয় কমিটি। এতে কোম্পানিটির সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

তবে সিএজি বলেছে, ইডিসিএল কর্তৃপক্ষের এই ব্যাখ্যাটি প্রথম দরপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এরপরের ২ বারের জন্য নয়।

প্রতিবেদনে দেশে জনস্বাস্থ্য সংকটের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের উৎপাদন না করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়াও, ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্যাক্টরি প্ল্যান্ট-৩ এর জন্য কেনা আরও একটি সরঞ্জাম আড়াই বছর ধরে স্থাপন না করে ও অব্যবহৃত রেখে প্রায় ১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা মহামারির কারণে দেরি হয়েছে বলে জবাব দেয়। তবে অডিট দল তাদের এই অজুহাতকে 'অযৌক্তিক' বলে উল্লেখ করেছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কর্মচারীদের জন্য চালু করা বিশেষ ভাতা এমন কর্মচারীদের দেওয়া, যারা এর সঙ্গে ছিলেন না। এতে কোম্পানিটি ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ক্ষতি করেছে।

সিএজির নিরীক্ষক দল সেই ভাতা কোম্পানির তহবিলে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago