সুদানে সশস্ত্র সংঘাত: তীব্র খাদ্য সংকটে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা

দেশে ফেরার চেষ্টায় বিমানবন্দরে ভিড় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের। ছবি: ইউএনবি

ক্ষমতার দখল নিয়ে ২ বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে সুদানের রাজধানী খার্তুমে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছেন। ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় খার্তুমে নিত্যপণ্যের দাম এখন বাড়তি। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় খাবার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই বাংলাদেশিদের কাছে।

খার্তুম থেকে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথোপকথনে কয়েকজন বাংলাদেশি জানিয়েছেন, মজুত খাদ্য বাঁচিয়ে রাখতে কিছুদিন ধরেই তারা কম কম খাচ্ছেন।

১০ মাস ধরে খার্তুমে থাকা নাজমুল আলী বলেন, 'একদিকে প্রাণ যাওয়ার ভয়, অন্যদিকে খাদ্য সংকট। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে, কখনো কখনো এক লিটার খাবার পানি সংগ্রহ করতে আমাদের ১ কিলোমিটারেরও বেশি হাঁটতে হয়।'

নাজমুল ও রাসেল মিয়াসহ আরও ৪ বাংলাদেশি বর্তমানে খার্তুমের একটি বাড়িতে একসঙ্গে আছেন।

রাসেল জানান, ভবিষ্যতের কথা ভেবে মজুত খাদ্য বাঁচিয়ে রাখতে তারা দৈনিক খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই মাসের শুরুতে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা কেবল (মজুত রাখা) চাল, ডাল এবং আলু খাচ্ছি। আমরা এখন দিনে ২ খাবার খাচ্ছি। আমাদের মজুত করা খাবার ফুরিয়ে আসছে।'

ইন্টারনেট সমস্যার কারণে বাংলাদেশিরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কমই যোগাযোগ করতে পারছেন উল্লেখ করে রাসেল আরও জানান, তারা সুদানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং জানতে পেরেছেন যে, তারা আজ রোববার দেশে ফিরতে পারেন।

১৮ বছর ধরে সুদানে বসবাসরত সৈকত বলেন, 'লুটেরাদের কাছে আমি সবকিছু হারিয়েছি। আমার ৩টি গাড়ি এবং ১টি মোটরসাইকেল ছিল। আমার কাছে থাকা ৭ হাজার ডলার ও জামাকাপড়ও ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।'

২ চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে শহরে একটি বাড়িতে থাকা সৈকত জানান, তারাও বাংলাদেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।

সুদানের সেনাবাহিনী ও প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে গত ১৫ এপ্রিল থেকে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। পালিয়ে গেছেন হাজারো অধিবাসী।

সুদানের বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি সুলতান দানেশ আলীর ভাষ্য, খার্তুমে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংলাদেশি ঈদের আগেই দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। এ জন্য তাদের হাতে খাবার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই।

সংঘাত শুরুর পর থেকে খাদ্যদ্রব্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ কেজি চালের দাম এখন ৪২০ টাকা, যা সংঘাতের আগে ১০০ টাকারও কম ছিল।

বর্তমানে যে কয়েকটি দোকান খোলা আছে সেখানে খাবারের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় অপরাধীরা খাবার ছিনিয়ে নিতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানান দানেশ আলী।

এদিকে গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

খার্তুম থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রথমে পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে তাদের জেদ্দায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কয়েকটি ফ্লাইটে তাদের বাংলাদেশে আনা হবে।

খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে খার্তুম ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলো থেকে বাংলাদেশিদের পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৯টি বাসের ব্যবস্থা করেছে। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের একটি দল তাদের সহায়তার জন্য সেখানে পৌঁছাবে।

মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুদানে আটকে পড়া সব বাংলাদেশিকে আগামী ২ মের মধ্যে পোর্ট সুদানে এনে দু-একদিনের মধ্যে জেদ্দায় পৌঁছে দেওয়া হবে।

সুদান থেকে আনা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য জেদ্দার দুটি বাংলাদেশি স্কুল খাবার, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করছে।

তবে বাংলাদেশিরা বলছেন, খার্তুম থেকে বন্দর সুদান প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে। এই ২ জায়গার মধ্যবর্তী রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে বেঁচে ফেরার পুরো যাত্রাটিই চ্যালেঞ্জের।

Comments

The Daily Star  | English
government bank borrowing target

Govt to give special benefits to employees, pensioners from July 1

For self-governing and state-owned institutions, the benefit must be funded from their budgets

1h ago