ইতিহাস অধ্যয়নের জন্য আবুল মনসুর আহমদদের কাছে যেতে হয়: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আমাদের যে ইতিহাস চর্চা হচ্ছে, তা একেবারে নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে। এ কারণে ইতিহাস অধ্যয়নের জন্য আমাদের আবুল মনসুর আহমদদের কাছে যেতে হয়।'
এই লেখক-শিক্ষাবিদ বলেন, 'ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কের কারণ ইতিহাস ছিলই না, সমাজবিজ্ঞানের বই লেখা হয়েছে, ইতিহাসের কোনো অংশ নেই। ইতিহাস তড়িঘড়ি করে লেখা হয়েছে।'
আজ শনিবার প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের 'বাংলাদেশের কালচার' গ্রন্থের ওপর আলোচনা ও রিভিউ প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আবুল মনসুর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ।
ঢাকার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উল্লিখিত গ্রন্থের ওপর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আদনান আরিফ সালিম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিব্যদ্যুতি সরকার এবং কবি আফরোজা সোমা।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি নিয়ে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার যে পর্যবেক্ষণ হাজির করেন তা হলো, 'সংস্কৃতি যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা জানি। সভ্যতার চাইতেও সংস্কৃতি বড় এ কথাটি আমরা জানি। কিন্তু সংস্কৃতির চর্চা বাংলাদেশে এখন অত্যন্ত নিম্ন জায়গায় পৌঁছে গেছে। যেমনভাবে আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, তেমনভাবে আমাদের সংস্কৃতির চর্চাও শুকিয়ে যাচ্ছে।'
এখন বাংলাদেশে সমষ্টিগত সংস্কৃতির চর্চা ক্রমাগত সংকীর্ণ হয়ে আসছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'সমষ্টিগত চর্চা নেই। মুঠোফোনের মধ্যে, ইন্টারনেটের মধ্যে, ঘরের ভেতর, টেলিভিশনে ব্যাক্তিগত সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে। কী অনুশীলন হচ্ছে? ওয়াজ মাহফিল। এটা ভালোই চলছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যা ঘটছে তা খুবই বিপজ্জনক।'
তাই সংস্কৃতি চর্চায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন এই শিক্ষাবিদ। বলেন, 'আজকের বিশ্বে মানবসভ্যতা এমন এক মোড়ে এসে পৌঁছেছে, যেখানে এই সভ্যতা টিকে থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। এখন এটা সংস্কৃতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। ব্যক্তিগত মালিকানার এই সংস্কৃতি কি অগ্রসর হবে, নাকি সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে?'
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম আবুল মনসুর আহমদের 'বাংলাদেশের কালচার' গ্রন্থের আলোচনায় বলেন, 'এই বইয়ে (বাংলাদেশের কালচার) সংস্কৃতির ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি সব ধরণের হাওয়াই ব্যাপার থেকে মুক্ত।'
এই অধ্যাপকের ভাষ্য, পদ্ধতিগত ব্যাপারে আবুল মনসুর আহমদ তার প্রতিটি লেখায় অত্যন্ত হুঁশিয়ার ছিলেন।
সমসাময়িক গবেষকদের জন্য 'বাংলাদেশের কালচার' বইটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা আছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আদনান আরিফ সালিম বলেন, 'আমরা যদি বিভিন্ন তাত্ত্বিক ধারণার আলোকে এটি ব্যাখ্যা করি, বিশ্লেষণ করি এবং নতুন করে বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে আমি মনে করি তরুণ গবেষকরা এখান থেকে অনেক মূল্যবান দিকনির্দেশনা পাবেন।'
আলোচনায় অংশ নেওয়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিব্যদ্যুতি সরকারের অভিমত, রচনার শব্দশৈলীতে আবুল মনসুর আহমদ খুবই অনন্য। তিনি আলোচ্য বইটি সম্পর্কে বলেন, 'বইটি সংস্কৃতির সংজ্ঞা প্রদান করে না, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দেয়। বইয়ের নিবন্ধগুলো থিসিসের মতো।'
আলোচনা পর্ব শেষে 'বাংলাদেশের কালচার' বইয়ের রিভিউ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।
প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পান যথাক্রমে ফাইজা বিনতে হক ও জোবায়ের ইবনে কামাল।
Comments