বছরের প্রথম ৩ মাসে হয়রানি, নির্যাতনের শিকার ৫৬ সাংবাদিক: আসক
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে দেশে ৫৬ জন সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
গতকাল শুক্রবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খানের সই করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজস্ব সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আসক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামানকে সিআইডি পরিচয়ে ভোর রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং দিনভর তাকে আটকের ঘটনা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োগিক আচরণ যে অসঙ্গত ও বেআইনি তা প্রতীয়মান হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদককে ভোর রাতে বিনা পরোয়ানায় তুলে নিয়ে আটক রাখার মতো অপতৎপরতা এই ধরনের হয়রানীমূলক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'সাতক্ষীরায় কর্মরত সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে আটকের পর পুলিশ দিনভর অস্বীকার করে প্রায় ৯ ঘণ্টা পরে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। এ ছাড়া গুলশানের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ সংগ্রহকালে দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক জহিরুল ইসলামকে গুলশান থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করে।'
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিরোধ করে তুলতে প্ররোচিত করবে। এর আগে আইনমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা গ্রহণের আগে বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার প্রতিফলন এ ঘটনাসমূহের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। বরং উচ্চ পদস্থ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রথম আলোর প্রতিবেদক এবং সম্পাদক সম্পর্কে নানা মন্তব্য এ ধরনের মামলা দায়ের করতে অতি উৎসাহীদের অনুপ্রাণিত করছে বলে মনে হচ্ছে।'
এ ছাড়া সাংবাদিক ও সকল মুক্তচিন্তা চর্চাকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, 'ইতোমধ্যে এই আইনটি নিবর্তনমূলক আইন হিসেবে সবার কাছে প্রতিপন্ন হয়েছে। আসক শুরু থেকেই বিতর্কিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।'
আসকের প্রতিবেদনে গত ৩ মাসে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে মৃত্যু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা, শিশু নির্যাতন ও হত্যা, সীমান্ত সংঘাত, কারা হেফাজতে মৃত্যু ও গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা
গত ৩ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ ১০২টি রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৩৭৪ জন।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে মৃত্যু
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গত ৩ মাসে ৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ জন পুলিশ কর্তৃক এবং ২ জন র্যাব কর্তৃক নিহত হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে র্যাব ও পুলিশের শারীরিক নির্যাতনে ২ জন এবং র্যাবের গুলিতে ১ জন নিহত হন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ
আসক জানিয়েছে, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ অনুযায়ী, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ৪ জনকে অপহরণের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মধ্যে পরবর্তীকালে ৪ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Comments