সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারে টিআইবির নিন্দা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গভীর রাতে তার বাসা থেকে তুলে নেওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজিরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে টিআইবি এই নিন্দা জানায়।

সংস্থাটি মনে করে, এই ঘটনা একজন সাংবাদিক, দেশের একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে।

এ ছাড়া গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সংবাদকর্মী হিসেবে তো বটেই, একজন নাগরিক হিসেবেও শামসের সাংবিধানিক অধিকারের মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কেন না বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যদি আইনগতভাবে আটক করা হয়, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তা করতে পরিষ্কারভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি, যে মামলায় আটক দেখিয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়েছে, সেটিও দায়ের করা হয়েছে তুলে নেওয়ার ২০ ঘণ্টারও পরে।' 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে কোনো প্রতিবেদনের ভুল বা অসঙ্গতি থাকলে কেউ তা নিয়ে সংক্ষুব্ধ হতে পারেন এবং তা নিরসনের জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল আইন রয়েছে এবং বিদ্যমান সেই আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকার কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'প্রেস কাউন্সিল আইনকে উপেক্ষা করে সরাসরি কোনো প্রতিবেদককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং সমালোচনামূলক বা ভিন্নমত প্রকাশ করলে শায়েস্তা করার সরকারি অভিপ্রায়কে স্পষ্ট করে তোলে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের নামান্তর।' 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শামসকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তাতে সশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের সম্পাদক, সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২), ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলা করা হয়েছে, এর মধ্যে ৩১ ধারা অজামিনযোগ্য। এই ধারাসমূহের যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষ করে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এই মর্মে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'গত ২ দিনে আরও ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এই কালাকানুন তৈরির সময় থেকেই টিআইবি সব সময় আইনটির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছে। এমনকি আইনমন্ত্রীও এই আইনের অপব্যবহারের প্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তারপরও এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অজামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ার কারণে অপরাধ প্রমাণিত না হলেও, অভিযুক্তকে "শায়েস্তা" করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তা করাও হচ্ছে।'

বিশ্ব মুক্তগণমাধ্যম সূচক ২০২২-এর উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, 'বিশ্বের ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২; যা কিনা তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের (১৫৬) চেয়েও নিচে। এই অবস্থান নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও শাসকদলের মাধ্যমে তার যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের প্রতিফলন। তাই অবিলম্বে শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও ভিন্ন মতাবলম্বীর কণ্ঠরোধকারী নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।'
 

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Election in first half of ’26 is not unreasonable, but Dec ’25 is doable

Whatever the differing stances of various political parties may be, people in general would prefer to exercise their franchise.

10h ago