রেলওয়ে-এলজিইডির সমীক্ষা

দুর্ঘটনারোধে ২ হাজার লেভেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন

রেল ক্রসিং

দেশের ৩ হাজার ১১১টি লেভেলক্রসিংয়ের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অনিরাপদ। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রায় ২ হাজার লেভেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) করা যৌথ এক সমীক্ষায় এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এতে ৪৭টি লেভেলক্রসিংয়ে ওভারপাস বা আন্ডারপাস নির্মাণ এবং গেটম্যান না থাকা ১৯৪টি ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ট্রেন আসার সময় সতর্কতা ঘণ্টা বেজে উঠে।

সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে—১ হাজার ৪৩৬টি ক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার ও বিদ্যুৎ-টেলিফোন লাইন স্থাপনসহ অন্যান্য মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা।

গত বছর রেলওয়ে ও এলজিইডির করা ওই সমীক্ষায় স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত ৬৩টি ক্রসিং বন্ধ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, তারা ২ হাজার ৮৩টি লেভেলক্রসিংয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮০টিই অননুমোদিত।

দুর্ঘটনা এড়াতে ক্রসিংগুলোতে ৫ হাজার ৭৭২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে সমীক্ষায়।

সমীক্ষার ফল পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি তা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

দেশের ৩ হাজার ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল নেটওয়ার্কে ক্রসিংগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশই অননুমোদিত বা সেগুলোতে কোনো গেটম্যান নেই। এর ফলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০২২ সালের আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩ হাজার ১১১টি লেভেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৮৬টি অনুমোদিত হলেও ৯৪৮টিতে কোনো গেটম্যান নেই।

আর ১ হাজার ২২৫টি অননুমোদিত লেভেলক্রসিংয়েও কোনো গেটম্যান নেই। গেটম্যান ছাড়া অনুমোদিত ক্রসিংসহ গেটম্যান ছাড়া লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা মোট ২ হাজার ১৭৩টি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নথি থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থাই অননুমোদিত এসব লেভেলক্রসিং নির্মাণে জড়িত। এর মধ্যে ৫১০টি নির্মাণ করেছে এলজিইডি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ২ মাসে ৩৬টি রেল-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। গত বছর ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৩২৬ জন নিহত ও ১১৩ জন আহত হন।

এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই হয়েছে লেভেলক্রসিংয়ে।

গত বছরের ২৯ জুলাই চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে লেভেলক্রসিংয়ে একটি মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় মোট ১৩ জন নিহত হওয়ার পর লেভেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

ওই দুর্ঘটনার পর রেল মন্ত্রণালয় একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমীক্ষা শেষ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও এলজিইডিকে বলে।

গত বছর সমীক্ষা শেষ হলেও প্রতিবেদনটি গত মাসে রেলওয়ের সদর দপ্তরে দেওয়া হয় বলে প্রতিষ্ঠানটির সূত্রগুলো জানিয়েছে।

জরিপে করা আরেকটি সুপারিশ হলো—১০৮টি লেভেলক্রসিংয়ের ক্লাস আপগ্রেড করা।

ট্রেন চলাচল ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে লেভেলক্রসিংয়ের বেশ কয়েকটি গ্রেড রয়েছে—বিশেষ, এ, বি, সি এবং ডি। এই গ্রেডের ভিত্তিতেই লেভেলক্রসিংয়ে কর্মী নিয়োগ করা হয়।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা জরিপের ফলাফল রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে তা এলজিআরডিতে পাঠানো হবে।

 'লেভেলক্রসিংয়ে ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণের বিষয়ে রেলওয়েকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কারণ তাদের তৈরি করা রাস্তায় এগুলো নির্মাণ করতে হবে', বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে গত ১৬ মার্চ কামরুল আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্বয়ংক্রিয় লেভেলক্রসিং স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আর কিছু লেভেলক্রসিং বন্ধ করতেও কাজ করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands. 

2h ago