স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনগুলোর একটিরও বিচার হয়নি

সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদের জেল

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো সংগঠনকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা যায়নি। এর কারণ এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন না হওয়া।

গত শতাব্দীর ভয়াবহ এই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতাকারী সংগঠনগুলোর বিচারের জন্য আইন সংশোধনে সরকারের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না।

তবে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠনের পর আইসিটি-১ গত ১৩ বছরে ১৩৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড বা কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে অপর আইসিটি-২ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

এছাড়া কোভিড-১৯ এবং বিচারক স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আপিলের শুনানি করছে না সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। জানা গেছে, এই ধরনের প্রায় ২৮টি আপিল এখন বিচারাধীন।

সবশেষ এ ধরনের আপিল শুনানি হয়েছে গত ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর। দোষী সাব্যস্ত যুদ্ধাপরাধী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এটি দায়ের করেছিলেন।

আইসিটি সূত্র জানায়, দুই আইসিটি এ পর্যন্ত ৫১টি রায় দিয়েছেন, যার মধ্যে ৯৬ জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড, ২৬ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আট জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার পর ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩-এ একটি সংশোধনী আনে। যাতে শুধুমাত্র ব্যক্তিকে বিচারের বিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সরকার বলছে, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

আইন মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে আইনটি সংশোধনে একটি খসড়া তৈরি করলেও গত ৯ বছরে, বিচারের দাবি অপূর্ণ রেখে সংশোধনী পাস করার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার বলেছেন, সরকার আইন সংশোধনে কাজ করছে।

২০১৩ সালের ১৫ জুলাই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলার রায় দিয়ে, আইসিটি-১ পর্যবেক্ষণে বলেছিল, '...জামাত-ই-ইসলামী, অভিযুক্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধমূলক সংগঠন হিসাবে কাজ করেছিল। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়।'

লেখক ও যুদ্ধাপরাধ গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেন, 'এটা সন্তোষজনক যে বড় যুদ্ধাপরাধী যারা তাদের বিচার হয়েছে। তবে একইসঙ্গে, এটা খুবই হতাশাজনক যে যুদ্ধাপরাধে জড়িত সংগঠনগুলোর বিচারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এর মধ্যে—তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাইকমান্ড, জামায়াতে ইসলামী, রাজাকার, আলবদর এবং আল শামস--যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে সরাসরি জড়িত ছিল।'

শাহরিয়ার বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আইনমন্ত্রী বলে আসছেন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করবে, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, 'যুদ্ধাপরাধ মামলা এবং আপিলের বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনাল এবং সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এখন শুধুমাত্র একটি আইসিটি যুদ্ধাপরাধের মামলা পরিচালনা করছে।'

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত- শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগ আন্দোলনের পর যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবিতে গতি আসে।

আইনমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানা যায়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইসিটি কিছু রাজনৈতিক সংগঠনকে ১৯৭১ সালে তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য নিন্দা করেছে। কিন্তু তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না, কারণ এটি করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান যোগ করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের বিচারের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেঞ্চ থাকায় আপিল বিভাগ শিগগির যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আপিলের শুনানি শুরু করবে।

Comments

The Daily Star  | English
Concerns about the international crimes tribunals act amendment

Amended ICT law to allow trial of security personnel

The newly amended International Crimes (Tribunals) Act will allow for the prosecution of members of the army, navy, air force, police, Rapid Action Battalion, Border Guard Bangladesh and all intelligence agencies.

2h ago