সীমান্তে ‘মিলনমেলা’র অনুমতি দেয়নি বিএসএফ, হতাশ দর্শনার্থীরা

মিলনমেলা উপলক্ষে সীমান্তে মালদহ নদীপাড়ে অপেক্ষা করছিলেন কয়েক হাজার দর্শনার্থী। বিএসএফ মেলার অনুমতি না দেওয়ায় হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে গঙ্গাপূজা উপলক্ষে মিলনমেলা হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ অনুমতি না দেওয়ায় মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তে ৯১৫ নম্বর মেইন পিলারের কাছে মালদহ নদীপাড়ে এ মেলাটি গেল ৬০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই প্রথম মেলার অনুমতি দেয়নি বিএসএফ।

আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কয়েক হাজার বাংলাদেশি মিলনমেলার জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সিতাই থানার ভেরভেরি এলাকায় কাটাতারের বেড়ার কাছে গঙ্গাপূজা হয়। পরে দর্শনার্থীরা মালদহ নদীতে পূণ্যস্নান করেন। এ পূজা উপলক্ষে মালদহ নদীপাড়ে বাংলাদেশ-ভারতের মানুষ মিলিত হয়ে মিলনমেলা করেন।

দীর্ঘদিন পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আবেগতাড়িত হয়ে সকলে একে অপরকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করেন বলে এ মেলাকে 'কান্নাকাটির মেলা' বলা হয়।

স্থানীয় সুধীর চন্দ্র বর্মণ (৮০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাকিস্তান আমল থেকে মেলা হয়ে আসছে। এবছর প্রথমবারের মতো এ মেলা হতে দিলো না বিএসএফ। কেন এ মেলার অনুমতি দিলো না সেটা বলতে পারছি না। এ বছর অন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।'

শূন্যরেখায় দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী গ্রামের সুরেন চন্দ্র বর্মণ (৮২)। তিনি বলেন, 'আমার শরীরের অবস্থা ভালো নয়। দুই মেয়ে ভারতে থাকে। তাদের সঙ্গে ১০ বছর দেখা হয় না। আজ তাদের সঙ্গে সীমান্তের মেলায় দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু বিএসএফ মেলার অনুমতি না দেওয়ায় মেয়েদের সঙ্গে দেখা হয়নি।'

'মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথাও হয়েছিল। তারাও সীমান্তে এসেছিল। সারাদিন অপেক্ষা করে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি,' তিনি বলেন।

আদিতমারী উপজেলার বামনেরবাসা এলাকার যামিনীকান্ত রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারকাঁটার বেড়া আমাদের আলাদা করেছে। কিন্তু আমাদের প্রীতিবন্ধনকে আলাদা করতে পারেনি। আমরা আগের বছরগুলোতে সীমান্তের মিলনমেলায় এসেছিলাম এবং ভারতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম।'

'এবছর সীমান্তে মিলনমেলা হলো না! আমাদের পাসপোর্ট-ভিসা করার সামর্থ্য থাকলে এভাবে সীমান্তে মিলনমেলার জন্য অপেক্ষা করতাম না,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবছর সীমান্তে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করেছিলেন। বিএসএফ মেলার অনুমতি না দেওয়ায় দর্শনার্থীরা বাড়িতে ফিরে গেছেন। মিলনমেলাটি "কান্নাকাটির মেলা" হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এই সীমান্তের একটি ঐতিহ্য। বিএসএফ কেন অনুমতি দেয়নি সেটা জানা যায়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

6h ago