‘আশা করি প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতা রক্ষায় এগিয়ে আসবেন’

মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে 'একতরফা' উল্লেখ করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির উদ্যাগ চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রধান বিচারপতির প্রতি এই আহ্বান জানান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আজ এমন একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে যে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পুলিশ ও বহিরাগতদের ব্যবহার করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়।'

'এই সূত্রে আমি যেটা প্রত্যাশা করি, প্রধান বিচারপতি তার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবেন এবং প্রতিষ্ঠানটির পবিত্রতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন', যোগ করেন তিনি।

একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির 'একতরফা' নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে যে তথাকথিত নির্বাচন, সমস্ত কিছু বাতিল করে দিয়ে আবার নতুন করে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।'

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত মো. মোমতাজ উদ্দিন ফরিক এবং সম্পাদক হিসেবে একই প্যানেলের আব্দুর নূর দুলালসহ পূর্ণ প্যানেল নির্বাচিত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন।

ব্যাপক হট্টগোল, পুলিশের হামলার মধ্যে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হয়। বুধবার ভোটগ্রহণের প্রথম দিন ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বিএনপির নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দস কাজলসহ ৩৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত আওয়ামী লীগের মুখোশ আরেকবার উন্মোচিত হলো। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনের শেষ পেরেকটি ঠেকানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে, এখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে যারা দায়িত্বরত, কর্মরত রয়েছেন তাদের পবিত্র দায়িত্ব এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করা। আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে, সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের আক্রমণ করবে, প্রহার করবে, তাদের আহত করবে। এটা ছোট কথা নয়, এটা হালকা করে দেখার বিষয় নয়।'

'এসব ঘটনায় রাষ্ট্রের চরিত্র কী দাঁড়াচ্ছে? আমরা যেটা বলছি যে, এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে তারই প্রমাণ আমরা দেখতে পারছি। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাব বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য। তার ন্যূনতম যে প্রতিষ্ঠানগুলো তা রক্ষা করার জন্য সবার এগিয়ে আসা দরকার', যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা বারবার বলে এসেছি, বাংলাদেশ আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নেই, বাংলাদেশ এখন আর সত্যিকার অর্থে কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নেই। বাংলাদেশে যত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানআছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো এই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত প্রতিকল্পিতভাবে ধবংস করে দিচ্ছে। তার সর্বোচ্চ ন্যাক্কারজনক উদারহরণ আমরা সর্বোচ্চ আদালতে দেখলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আওয়ামী লীগ মধ্যযুগীয় কায়দায় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে ধবংস করে দিল। আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে প্রায় সম্পূর্ণ করায়াত্ব করে নিয়ে এখন চূড়ান্ত করতে চায়, বারগুলোকে জোর করে দখল করে নিতে চায়। এই কথাগুলো ক্ষোভ, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে আজকে।'

জাতীয় নির্বাচনেও কারচুপির আশঙ্কা করছেন কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'হয়ে যেতে পারে না, হবে। হবে বলে তো আমরা বলছি, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। এদের চরিত্র হয়ে গেছে যে, তারা জোর করে সব কিছু নিয়ে নেবে। যখনই তারা ক্ষমতায় থাকবে, যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন তারা নিয়ন্ত্রণ নেবে, সেই নির্বাচন করে তাদের মতো তারা প্রার্থীদের জয়ী ঘোষণা করবে।'

'সুতরাং কোনোমতেই এই আওয়ামী লীগ সরকারের, যারা আসলে এখন মধ্যযুগীয় বর্বরতায় চলে গেছে, তাদের অধীনে কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব না', যোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
child victims of July uprising Bangladesh

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

11h ago