পুলিশের রাবার বুলেটে যত হতাহত
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধের পুলিশের রবারের বুলেট ও অন্যান্য তথাকথিত কম সহিংস অস্ত্রের অপব্যবহারে গত ৫ বছরে বিশ্বের ৩০ দেশের হাজারো মানুষ হতাহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
আজ মঙ্গলবার কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক নির্যাতন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে পুলিশের ব্যবহৃত উপকরণের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণে আনা উচিৎ, যার মাঝে রয়েছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট প্রোজেকটাইল (কিপ), যেমন রবারের প্রলেপ দেওয়া ধাতব বুলেট। এ উদ্যোগে বিক্ষোভ জানানোর অধিকার সুরক্ষিত হবে।
৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি বেলারুশ, কলম্বিয়া, মিশর, ফ্রান্স, গ্রিস, হংকং, ইরান, ইরাক, ইসরায়েল লেবানন, মরক্কো, মিয়ানমার, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুদান, থাইল্যান্ড, উগান্ডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্থান পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত ৫ বছরে এ দেশগুলোতে বেআইনি ভাবে এবং কখনো কখনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে 'কিপ' ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার মাঝে রয়েছে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত বিক্ষোভকারীদের মাথার অংশ লক্ষ্য করে পুলিশের রবারের বুলেটর ব্যবহার, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দিকে এলোপাথাড়ি বুলেট নিক্ষেপ ও পলায়নরত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার। সামরিক হেলিকপ্টার থেকে এ ধরনের বুলেট নিক্ষেপের ঘটনারও উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে।
এ ধরনের অস্ত্রের অপব্যবহারে মৃত্যুর পাশাপাশি 'আশংকাজনক হারে চোখের ক্ষয়ক্ষতি' বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।
এসব ঘটনায় চোখের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে আঘাত পাওয়ার পাশাপাশি অনেকে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন এবং কারও কারও হাড় ও খুলিতে ফাটল ধরেছে, মস্তিষ্ক আঘাত পেয়েছে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে আঘাত, পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি মানসিক সমস্যায়ও ভুগছেন অনেকে।
প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিবৃতির বরাত দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের 'কর্তৃপক্ষের উচিৎ বিক্ষোভ দমন-পীড়নের অবসান ঘটানো'।
বিবৃতি মতে, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর বিরোধী দল বিএনপির কর্মী-সমর্থক ও পুলিশের মাঝে সংঘর্ষে ১ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ৬০ জনের আহত হওয়ার প্রসঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ইয়ামিনি মিশ্র বলেন, 'এ ঘটনা দেখায় যে- বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মানুষের জীবনের প্রতি খুব কমই গুরুত্ব দেয়। একইসঙ্গে এটি বার্তা দেয় যে- যারা মানবাধিকার চর্চার সাহস করে তাদের ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, বড় ধরনের বিক্ষোভ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অতিরিক্ত বল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং কেবল আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি আরও জানায়, সেদিন হাজারো বিএনপি সমর্থক-কর্মী দলটির নয়াপল্টনে অবস্থিত সদরদপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ তাদের ওপর তাজা বুলেট, ছড়রা বুলেট, রবারের বুলেট ও টিয়ার গ্যাস প্রয়োগ করে। ১০ ডিসেম্বর একটি বড় জনসমাবেশের আহ্বান জানানোর আগে এ ঘটনা ঘটে।
অ্যামনেস্টির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে রবার বুলেটের ব্যবহার সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে রবারের আস্তরণ দেওয়া ধাতব বুলেট প্রয়োগ করে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ২০০০ সালে এ ধরনের অস্ত্রকে মারণাস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশের বিক্ষোভ দমন অভিযানে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও তা কার্যকর হয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল ২০১৮ সালের এক বিক্ষোভে এ ধরনের বুলেটর ব্যবহারে ৪৩৮ ফিলিস্তিনি আহত হওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে।
ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা অ্যাসোসিয়েট মাইকেল ক্রাউলি বলেন, 'নির্যাতন-মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চালু হলে অপব্যবহারযোগ্য সব ধরনের অস্ত্র ও উপকরণের বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ নেমে আসবে, যার মাঝে রয়েছে কিপ, রবারের প্রলেপ দেওয়া বুলেট এবং এ ধরনের অন্যান্য অস্ত্র, যার ব্যবহারে মানুষ গুরুতর আহত এমন কী মারাও যেতে পারে'।
Comments