বিএসএমএমইউর বহির্বিভাগে রোগী হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নিন: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি না করতে ডাক্তারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, 'বড় ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না... অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে'। তিনি চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্যও জোর তাগিদ দেন। রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য আবদুল হামিদ ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিএসএমএমইউ এর সেবাদান পদ্ধতি সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, 'বিএসএমএমইউর আউটডোরে প্রায়ই সকালে ল্যাবরেটরি বিভাগ খোলা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।'

সক্ষমতার দিক থেকে বিএসএমএমইউকে 'সেন্টার অব এক্সিলেন্স' হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নেই। চিকিৎসার নামে সাইনর্বোডসর্বস্ব ও দালান-নির্ভর সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সঙ্গে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, কিছু অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা, চরম হয়রানির শিকার হন। তিনি বলেন, 'মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ ... রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যেকোনো রোগীর পরম কাম্য।'

আবদুল হামিদ বলেন, চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশেও বিদেশের মতো বাণিজ্যিক নামের (ট্রেড নেম) পরিবর্তে সাধারণ নাম (জেনেরিক নেম) চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে।

রাষ্ট্রপ্রধান চিকিৎসা সেবায় গবেষণা কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ কারণে রোগ-জীবাণুর ধরন ও প্রকোপ পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে মানব জাতির জন্য হুমকি মোকাবিলায় বিভিন্ন রোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নির্ণয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

বিএসএমএমইউ আচার্য বলেন, চিকিৎসা গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরন উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। তাই আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই কেবলমাত্র পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগসমুহের কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'আমি আশা করি, আপনারা উদার মন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে "ভালো" ডাক্তারের পাশাপাশি "বড়" মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে 'সমাবর্তন বক্তা' হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ-বর্ধন আজাদ। বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য তাকে ক্যাম্পাসের স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে এর প্রধান বক্তা হিসেবে তার উপস্থিতি দেশের গণমানুষকে আরও ভালো সেবা প্রদানের দিকে স্নাতকদের নির্দেশনা দিবে। ডিগ্রিপ্রাপ্ত গবেষক, চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মনে রাখবেন - ডিগ্রি অর্জনের পেছনে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরও বড় অবদান। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরও যত্নবান হওয়া উচিত। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে থাকা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোকে অবশ্যই গুণে-মানে সমৃদ্ধ হতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে।

হাসপাতালে নার্সদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সাহচর্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক ও তার আরোগ্য ত্বরান্বিত করে। তিনি নার্সদের রোগীর সেবায় আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দেন এবং একই সঙ্গে নার্সদের কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও তাদের যথাযথ সামাজিক মর্যাদা প্রদানও জরুরি।

দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থাকার পরও প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তাই আমাদের ভাবতে হবে আসল সমস্যাটা কোথায়। রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে যে, ডাক্তারগণ আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। তারা কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাঙচুর করবেন- এটাও কাম্য নয়। এজন্য ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্যই নয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। আচার্য আশা প্রকাশ করেন, বিএসএমএমইউ এদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিকাশ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথ পরিক্রমায় এবং একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল।

সমাবর্তনে তিনজনকে সম্মানসূচক (পিএইচডি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তারা হলেন—সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, বিএসএমএমইউ এর সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. কাজী শহিদুল আলম।

চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩৫ জনকে 'চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক' দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago