সরকারি ঘরে কষ্টের জীবন

সরকারি ঘর
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের খারিজ্জমা এলাকায় সরকারি প্রকল্পের বাসিন্দা হাসেম ফকির ও তাসলিমা বেগম। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

হতদরিদ্র হাসেম ফকির (৮০) ও তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫৫) খালপাড়ের সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। ঘূর্ণিঝড় 'সিডর' সেই ঝুপড়ি ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে ফেলেন তারা। এলাকার স্কুলের বারান্দায়, কখনো অন্যের বাড়িতে তাদের দিন কাটাত।

পরে ওই এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য বিশেষ প্রকল্পে হাসেম ফকিরকে ঘর দেওয়া হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় তাদের। সেই ঘর আর মেরামত না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

হাসেম ফকিরের স্ত্রী তাসলিমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্ষায় পানি পড়েছে, শীতে ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকতে কষ্ট হয়। অনেকেই এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। যাওয়ার জায়গা না থাকায় এখানে ঘরের চারদিক ও চালে পলিথিন দিয়ে দিন কাটাচ্ছি।'

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের খারিজ্জমা এলাকায় বিশেষ প্রকল্পের বাসিন্দা হাসেম ফকির ও তাসলিমা বেগম। জাপান সরকারের অর্থায়নে তৈরি এই আবাসন 'জাপানি ব্যারাক' নামে পরিচিত। এখানে ৪ ব্যারাকে ৪০ ঘর ৪০ পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ৩৪ পরিবার এখন আর সেখানে থাকে না। ঘরগুলো ফাঁকা। ৬ পরিবার জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, খারিজ্জমা নদীর পাড়ে সেই প্রকল্পের অনেক ঘর ফাঁকা। টিনের চালে মরিচা ধরে ফুটো হয়েছে। বেশির ভাগ ঘরের মেঝে ও বারান্দার মাটি সরে গেছে। মরিচা ধরে টিনের বেড়া ক্ষয়ে ফাঁকা হয়ে আছে। ইটের খোয়া–সিমেন্ট দিয়ে তৈরি খুঁটিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

আরও দেখা যায়—বেশির ভাগ ঘরের দরজা ও জানালা ভাঙা। অনেকে বেড়ার চারদিক পুরোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। শৌচাগার যেন থেকেও নেই।

এই রকম কয়েকটি ঘরের পর দেখা যায় এক নারী তার ঘরের বারান্দায় রান্না করছেন। তাসলিমা বেগমের (৫০) পাশে স্বামী হাসেম ফকির (৮০) চাদর গায়ে জড়িয়ে চুলার আগুনের উত্তাপ নিচ্ছেন।

তাসলিমা বেগম বলেন, 'ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। এক মেয়ে ফারজানা (১৫) সঙ্গে থাকে। মা-মেয়ে অন্যের বাড়ি কাজ করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'

তিনি জানান, নির্মাণের পর ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শৌচাগারগুলোও ব্যবহার করা যায় না। গরিব বলে তারা অবহেলায় পড়ে আছেন।

তাসলিমা বেগমের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় সেই প্রকল্পের অপর বাসিন্দা শারমিন বেগমের (২৫) কণ্ঠে। তিনিও ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্ষায় পানি পড়েছে। এখন ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকতে কষ্ট হয়। অনেকেই এখান থেকে চলে গেছেন। যাওয়ার জায়গা না থাকায় ঘরের চারদিক ও চাল পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিন কাটাচ্ছি।'

স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় 'সিডর' ও পরবর্তী সময়ে প্রকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেসময় বেশ কয়েকটি দেশ দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় জাপান সরকারের অর্থায়নে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের খারিজ্জমা নদীপাড়ে অসহায় মানুষের আশ্রয়ের জন্য বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪ ব্যারাকে ৪০ টিনের ঘর তৈরি করা হয়।

২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসন ঘরগুলো ভূমি-গৃহহীন ৪০ পরিবারের সদস্যদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করলে তারা সেখানে বসবাস শুরু করেন।

কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাঈনুল ইসলাম সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভূমিহীন পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন এসব ঘর। প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ। এ বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করব।'

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়ভাবে ঘরগুলো মেরামতের সুযোগ নেই। তবে এখন যে পরিবারগুলো সেখানে আছে তাদের তালিকা করা হবে। নতুন ঘরের বরাদ্দ এলে তাদের সেখানে পূনর্বাসনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Manu Mia, who dug thousands of graves without pay, passes away

He had been digging graves for 50 years and never accepted any payment for his service

1h ago