কারুশিল্প মেলা: ভাগের স্টলে পণ্য সাজানোই দায়, সহযোগীর সম্মানী নেই

নারায়ণগঞ্জের কারুশিল্প মেলা। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী 'লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব' আয়োজনের বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন মেলায় অংশ নেওয়া কারুশিল্পীরা।

তারা বলছেন, প্রতিবছর মেলায় একেকজন কারুশিল্পীকে একটি করে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হলেও এবার ২ জনকে একটি করে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে জায়গা কমে আসায় ছোট পরিসরে পণ্য সাজিয়ে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে তাদের।

এর পাাশাপাশি কারুশিল্পীদের অভিযোগ, অন্য বছরগুলোতে প্রতিজন কারুশিল্পীর পাশাপাশি তাদের একজন সহযোগীর জন্যও সম্মানী হিসেবে দৈনিক ৫০০ টাকা বরাদ্দ রাখা হতো। এবার তারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এ ছাড়া মেলায় দোকান বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবার সত্যিকারের কারুশিল্পীদের অনেকে বাদ পড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

নারায়ণগঞ্জের কারুশিল্প মেলা। ছবি: স্টার

বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ১৯৭৬ সাল থেকে চলে আসছে এই মেলা। সোনারগাঁওয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে গত ১৮ জানুয়ারি শুরু হওয়া এবাবের মেলা চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৬৪ জন কারুশিল্পী অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের ৩২টি স্টল। এছাড়া উদ্যোক্তা ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে আরও ৬৮টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পাটের তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে কাজ করা রংপুরের রাশিদা বেগম এবারই প্রথম কারুশিল্প মেলায় অংশ নিতে এসেছেন। অন্যদের মতো তাকেও স্টল ভাগ করে নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, 'রংপুরে আমার একটি কারখানা আছে। আমার অধীনে সেখানে ৫০ জন কাজ করে। এবার মেলায় পাটের তৈরি অনেক জিনিসপত্র আনলেও মাত্র একটি বস্তা খুলতে পেরেছি। তাও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সব পণ্য সাজাতে পারিনি। আমার সঙ্গে যিনি স্টল ভাগ করছেন তিনিও একই সমস্যায় পড়েছেন।'

নারায়ণগঞ্জের কারুশিল্প মেলা। ছবি: স্টার

একই সমস্যার কথা জানান মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল, নকশী কাঁথা তৈরির শিল্পী হোসনে আরা, পটচিত্রশিল্পী রতন কুমার পাল ও কাঠখোদাই শিল্পী বীরেন্দ্র সুত্রধরও।

রাজশাহীর পেশাদার পটচিত্রশিল্পী রতন পাল বলেন, 'দোকানের আয়তন ছোট হওয়ায় পণ্য সাজানোর পর ভেতরে নড়াচড়ার জায়গাও পাচ্ছি না। শুধু পণ্য সাজিয়ে বসলেই তো হবে না, ভেতরে কাজ করার জায়গাও তো থাকতে হবে।'

মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পালও বলেন, 'একজনকে একটা দোকান দিলে শান্তিমতো কাজ করা যেত। এইটা তারা (কর্তৃপক্ষ) করেননি। আগামীবার যেন বিষয়টা লক্ষ্য রাখা হয়।'

আবার স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে সত্যিকারের অনেক কারুশিল্পীকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নকশীকাঁথা নিয়ে কাজ করা হোসনে আরা। বলেন, 'আসল শিল্পীদের কোন মূল্যায়ন নাই। খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন এইখানে স্টল পাওয়া অনেকে কর্মরত শিল্পী না। তারপরও সম্পর্কের খাতিরে তাদের জায়গা দেওয়া হইছে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কারুশিল্পী বলেন, 'ডুপ্লিকেটদের (মেলায়) আইনা আমাদের মতো শিল্পীদের বিপদে ফালাইসে। কোনটা ডুপ্লিকেট আর কোনটা আসল শিল্পী- তার সবই কর্তৃপক্ষ জানে। জাইনাও নিজেরা সুবিধা নিয়া তাদের জায়গা দিছে মেলায়।'

নারায়ণগঞ্জের কারুশিল্প মেলা। ছবি: স্টার

একটি স্টল ২ জনকে বরাদ্দ দেওয়া প্রসঙ্গে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক রবিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার মেলায় কারুশিল্পীদের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে জায়গা সংকুলানে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে ২ জনকে একটি করে স্টল দেওয়া হয়েছে। সবাইকে একটি করে স্টল দেওয়ার মতো জায়গা ফাউন্ডেশন চত্বরে নেই। এমন কিছু করতে গেলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের হাঁটাচলায় সমস্যা হতো।'

এছাড়া সত্যিকারের কারুশিল্পীদের বাইরে রেখে ফাউন্ডেশনের পছন্দের মানুষদের স্টল বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে রবিউল ইসলামের ভাষ্য, 'এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।'

সার্বিক বিষয়ে সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা এবং কবি ও সংস্কৃতিকর্মী সাহেদ কায়েসের বক্তব্য, 'বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিবছরই এই মেলা ও লোকজ উৎসব আয়োজন করছে। কিন্তু লোক ও কারুশিল্পীদের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এই শিল্পে আসতে পারে তেমন কোনো উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। এমনটি হচ্ছে না বলেই ২ জন কারুশিল্পীকে একটি স্টল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে তারা দ্বিতীয়বার ভাবেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

India’s white-ball tour of Bangladesh deferred to September 2026

The Bangladesh Cricket Board (BCB) on Saturday confirmed that India’s white-ball tour of Bangladesh, originally scheduled for next month, has been postponed to September 2026.

36m ago