এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করে: প্রধানমন্ত্রী
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা, অনাবাদী জমি চাষের উপযোগী করে তোলা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী এবং সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। তিনি আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে ৩ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের একটি কথাই বলবো, আমি আপনাদের মধ্যে একটি পরিবর্তন দেখেছি। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমি আসার পর সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটা যদি না হতো তাহলে আজকের বাংলাদেশের উন্নয়নে যে সফলতা পেয়েছি তা হতো না। আমাদের পরিকল্পনা, তৃণমূল থেকে দেশকে উন্নত করে আনতে চাই। উন্নয়ন শুধু রাজধানী বা শহর কেন্দ্রিক হবে না। এর জন্য আমার গ্রাম, আমার শহর ঘোষণা দিয়েছি। এতে গ্রামে অর্থনৈতিক প্রাণচঞ্চলতা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্ম সেতু নিজের অর্থায়নে তৈরি করার পর বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করে। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না এটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুঝে গেছে।
প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা মাঠ পর্যায়ে আছেন, যখন কোনো এলাকার জন্য কোনো প্রজেক্ট নেওয়া হয় তখন সেটি কতটুকু প্রযোজ্য, কতটুকু কার্যকর এবং মানুষ কতটা লাভবান হবে এবং অপচয় কতটা বন্ধ হবে সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত। প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হওয়ার পর কাজের মান এবং কাজ সঠিক হচ্ছে কি না তার তদারকি করার আপনাদের একটি দায়িত্ব আছে। আপনারা সেটি করতে পারেন। যেখানে সেখানে যত্রতত্র প্রকল্প নেওয়া আমি পছন্দ করি না। প্রকল্পের জন্য এখন যেটি প্রয়োজন সেটি আমি করতে চাই।
তিনি বলেন, করোনাকালীন অর্থনৈতিক মন্দায় সারা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আমাদের যাতে অর্থনৈতিক মন্দায় না পড়তে হয় সে জন্য কৃচ্ছ্রতা সাধনের কথা বলেছি। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিয়েছি এবং সেটার ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন। আর্থিক সংকট সারাবিশ্বে আছে। আমাদেরও আছে। কিন্তু আমাদের এমন সংকট নেই যে, আমরা চলতে পারবো না। আমাদের এখন অগ্রাধিকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা, মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত রাখা, মানুষের কল্যাণ আগে দেখা, সেখানে যত টাকা লাগুক। আমাদের কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে এর জন্য যা খরচ লাগে আমরা করবো। যেগুলো আমাদের এখনি প্রয়োজন নেই সেগুলো আমরা কেন করতে যাবো।
দেশীয় উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এখন কৃষি উৎপাদনের ওপর বেশি জোর দিয়েছি। বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য মন্দা দেখা দিয়েছে তার ধাক্কা যেন আমাদের ওপর না পড়ে। কিছু কিছু জিনিস আমরা আমদানি নির্ভর। কিন্তু আমরা তো উৎপাদন করতে পারি। কেন আমদানি নির্ভর থাকবো। এক সময় ছিল ভারত থেকে গরু না আসলে আমাদের কুরবানি হবে না। কিন্তু এখন তো আর তা নেই।
কৃষি পণ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক এলাকায় যে পণ্য উৎপাদন হয়, বিদেশে যেভাবে শাক-সবজি, ফলমূল সংরক্ষণ করে, চিলিং সিস্টেম করে, তার ব্যবস্থা আমরা নিতে চাচ্ছি। প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়ে এবং তার পর জেলা পর্যায়ে তা করতে চাচ্ছি। আমাদের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় তার ওপর ভিত্তি করে যাতে শিল্প গড়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ্য দিতে হবে। বিদেশি পণ্য আসবে তার সঙ্গে এদিকে বিশেষ লক্ষ্য দিতে হবে। এতে করে বাংলাদেশের অভাব তো হবেই না, উদ্বৃত্ত খাদ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। তাদের চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারবো। সেক্ষেত্রে পরিবহনের জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ নেব। আমাদের কার্গো কেনার পরিকল্পনা আছে। আগামীতে আমরা কিনবো। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে চাই। নৌপথে যেন পণ্য পরিবহনে চিলিং সিস্টেম থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি এলাকায় পরীক্ষাগার ও সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে পারলে পণ্য নষ্ট হবে না। আমাদের স্মার্ট অর্থনীতি, জনগোষ্ঠী ও সরকার হবে।
প্রধানমন্ত্রী জেলা জেলা প্রশাসকদের বেশ কয়েটি বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। বহু অনাবাদী জমি আছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। চাষের উপযোগী করে তুলতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। নাগরিকদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক নির্মাণ করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। নিয়মিত জেলার সরকারি ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। সরকারি ভূমি, জলাশয় রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।
Comments