কুয়াকাটা মহাসড়কে উপচে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগ-অস্বস্তি

কুয়াকাটা মহাসড়কে উপচে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগ-অস্বস্তি
কুয়াকাটা মহাসড়কে উপচে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগে পথচারী ও স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী শহরের প্রবেশ দ্বার কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। পৌরসভার হিসাব মতে, প্রতিদিন সেখানে ৩০ থেকে ৩২ টন গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলা হয়। 

এসব বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে ওই এলাকার পরিবেশ। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মহাসড়কটিতে চলাচলকারী যাত্রীসহ পর্যটকদের। 

নতুন করে বর্জ্য না ফেলা এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য পটুয়াখালী পৌর মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন কয়েকজন নাগরিক। আবেদনকারীদের মধ্যে আছে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোহানা হোসেন মিকি, জেলা মহিলা দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক উম্মে হেনা, জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলা শাখার সহসভাপতি আল-আমিন হাওলাদারসহ অনেকে।

এ বিষয়ে তারা গত ১৮ জানুয়ারি পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সংবাদ সম্মেলন শেষে পৌর মেয়রের কার্যালয়ে আবেদনটি জমা দেন।

কুয়াকাটা মহাসড়কে উপচে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগে পথচারী ও স্থানীয়রা।
কুয়াকাটা মহাসড়কে উপচে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগে পথচারী ও স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

আবেদন ও সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে পটুয়াখালী ব্রিজের টোল প্লাজার উত্তর পাশে রাস্তার ওপর অপরিকল্পিতভাবে শহরের গৃহস্থালির সংগৃহিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ওই এলাকায় প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস। বর্জ্য ফেলার স্থানের পাশ দিয়ে পটুয়াখালী শহরের প্রবেশপথ, ওই সড়ক ধরে স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকসহ প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত। এই সড়কের ১০০ গজের মধ্যেই আছে পটুয়াখালী দক্ষিণ বঙ্গ বৃদ্ধাশ্রম, যেখানে অর্ধশত অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের বাস। 

এ ছাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এ বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধের কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। 

স্থানীয়রা জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন স্থান না থাকায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর আগে কয়েক বছর ধরেই বিসিক শিল্প নগরীর পাশে লাউকাঠী নদীর পাশে এসব বর্জ্য ফেলার কারণে ওই এলাকার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীর পানিও দূষিত হয়ে পড়ে। 

গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ওই নদীটি পরিদর্শনকালে বিষয়টি তার নজরে এলে তিনি সেখানে বর্জ্য ফেলতে নিষেধ করেন এবং এরপর থেকেই পৌর কর্তৃপক্ষ মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলতে শুরু করে। 

স্থানীয় বাসিন্দা কালাম তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এখানে বর্জ্য ফেলার কারণে আমরা বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। তীব্র দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রবে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করেও থাকা যায় না। এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে অবিলম্বে এখানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা উচিত বলেও দাবি করেন তিনি। 

দক্ষিণ বঙ্গ বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বৃদ্ধাশ্রমের মাত্র ১০০ গজ উত্তরে প্রতিদিন কয়েকটন বর্জ্য ফেলার কারণে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এখানে বসবাসরত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে আছেন।'

এ বিষয়ে পটুয়াখালী পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ডা. একরামুল নাহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'শহরের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩২ টন বর্জ্য এখানে ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্যের দুর্গন্ধ ও পরিমাণ কমাতে কেরোসিন ঢেলে সারাক্ষণ পোড়ানো হচ্ছে। খুব দ্রুতই পৌরসভার নির্ধারিত স্থানে এসব বর্জ্য ফেলা হবে।'

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া এলাকায় বর্জ্য ফেলার জন্য ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে যেতে লোহালিয়া নদী পারাপার হতে হয়। নদীর ওপর সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় সেখানে বর্জ্যগুলো নেওয়া যাচ্ছে না। আগামী দুএক মাসের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং তখন এসব বর্জ্য লোহালিয়ার নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

2h ago