বইমেলায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দসহ ৫ দাবি আদর্শ প্রকাশনীর
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ এ প্রাপ্যতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেদের জন্য প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ চেয়েছে আদর্শ প্রকাশনী।
গত ১২ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি এবারের বইমেলার স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে। প্রকাশিত তালিকার আদর্শ প্রকাশনীর নাম ছিল না।
পরে বাংলা একাডেমি জানায়, 'রাজনৈতিক অশ্লীলতার' অভিযোগে আদর্শকে বইমেলায় স্টল দেওয়া হয়নি।
আদর্শ প্রকাশনী বলছে, বাংলা একাডেমি প্রতি বছরই বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন প্রকাশনীকে হয়রানি করে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশনীটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব রাহমান বলেন, 'প্রকাশনা হিসেবে নতুন লেখক, নতুন লেখা, নতুন প্রবণতা, নতুন পাঠক এবং নতুন পাঠরুচি নিয়েই আদর্শ। পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কূপমণ্ডুকতাজাত গোঁড়ামি তথা সস্তা মত-মতবাদ-মতাদর্শ ইত্যাদি থেকে আদর্শ মুক্ত। পাণ্ডুলিপি প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষসহ যেকোনো বিদ্বেষ ও কুৎসামূলক লেখা আদর্শ কঠোরভাবে পরিহার করে।'
'আদর্শ পাণ্ডুলিপি পরিকল্পনা এবং প্রকাশনার ক্ষেত্রে চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক পাঠ্যকে অগ্রাধিকার দেয়' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আদর্শ মানে ৬ শতাধিক বই, ৩ শতাধিক লেখক এবং লাখ লাখ পাঠক। আদর্শ স্টল না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ৩ শতাধিক লেখক ও লাখ লাখ পাঠক।'
আদর্শ জানায়, করোনার কারণে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ঋণ করে আদর্শ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অনেকগুলো বই প্রেসে আটকে আছে, অনেকগুলো বই বাঁধাইখানায় আটকে আছে।
মাহাবুব রাহমান বলেন, গত ১২ জানুয়ারি বিকেল বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে। প্রকাশিত তালিকার কোথাও আদর্শর নাম নেই। পরের দুইদিন শুক্র-শনিবার বাংলা একাডেমি বন্ধ থাকার কারণে গত ১৫ জানুয়ারি আমি বাংলা একাডেমিতে যাই। মেলা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন যে তার কাছে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র নেই। তিনি তার অধস্তন কর্মকর্তা কবিরের কাছে যেতে বললে কবির জানান, তার কাছে কোনো কাগজপত্র আসেনি।'
'৩১ সদস্যবিশিষ্ট মেলা কমিটিতে থাকা ৪ জন প্রকাশক প্রতিনিধিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারাও আমাকে জানান যে, তারাও কিছুই জানেন না এবং কমিটির মিটিংয়েও আদর্শর স্টল বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তখন আমি এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বাংলা একাডেমির ডিজিকে চিঠি দিয়ে আসি। সেই চিঠির কোনো উত্তর আমি পাইনি। গত ১৭ জানুয়ারি আরেকটি চিঠি দিই। সেই চিঠিরও অদ্যাবধি কোনো উত্তর পাইনি,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'মেলা কমিটিতে থাকা একজন প্রকাশক প্রতিনিধি আমাকে জানিয়েছেন, আদর্শ থেকে প্রকাশিত ৩টি বই নিয়ে বাংলা একাডেমির আপত্তি আছে। পরে মেলা কমিটির সচিব মুজাহিদ ভাই ফোনে বলেন, আদর্শর বইতে সরকারবিরোধী মত রয়েছে। এদিকে বাংলা একাডেমির ডিজি কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ফোনে বলেন যে, কোনো বইতে যদি কারও বিরুদ্ধে বক্তব্য থাকে তবে সেসব বইকে তারা মেলায় স্থান দিতে পারেন না।'
মাহাবুব রাহমান বলেন, 'সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলা একাডেমি এখন বলছে যে আদর্শর বই বাংলা একাডেমির স্টল বরাদ্দের নীতিমালা পরিপন্থী। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানা গেছে, এই নীতিমালা মনগড়া ও পরিবর্তনশীল। প্রতি বছর একুশে গ্রন্থমেলার প্রাক্কালে আয়োজক কমিটি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী নীতিমালা তৈরি করে, যার কোনো কপি লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক কাউকে দেওয়া হয় না। এই অদৃশ্য নীতিমালা মূলত লেখক-প্রকাশকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার কাজে ব্যবহৃত হয়, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।'
এ অবস্থায় বাংলা একাডেমির এসব তৎপরতা বন্ধের দাবি ছাড়াও ৫টি দাবি জানিয়েছে আদর্শ প্রকাশনী।
এগুলো হলো-
১। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় লেখক ও প্রকাশকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত রাখতে হবে।
২। অবিলম্বে আদর্শকে প্রাপ্যতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতে হবে।
৩। আদর্শর যে ৩টি বইয়ের ব্যাপারে বাংলা একাডেমি আপত্তি জানিয়েছে, সেগুলো মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রির পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৪। গ্রন্থমেলায় আদর্শসহ সব প্রকাশক ও লেখকদের হয়রানি বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। একুশে গ্রন্থমেলা প্রকাশকদের। অবিলম্বে এই গ্রন্থমেলার দায়িত্ব সব প্রকাশকের সমন্বয়ে গঠিত প্রকাশক গিল্ডের হাতে তুলে দিতে হবে।
Comments