শিলালিপি গবেষক মওলানা ফতেহপুরী মারা গেছেন
শিলালিপি বিশেষজ্ঞ এবং আরবী, ফারসি ও উর্দু ভাষার সুপণ্ডিত ও ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সম্পাদক মওলানা মুহাম্মদ নুরুদ্দিন ফতেহপুরী মারা গেছেন।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পোটান গ্রামে নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির পরিচালনা পরিষদ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
লেখক-গবেষক-অনুবাদক মওলানা ফতেহপুরী ৮০'র দশকে সরজমিনে বিভিন্ন অপ্রকাশিত শিলালিপির পাঠ সংগ্রহ শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চায় সরজমিনে শিলালিপির পাঠ সংগ্রহ তিনিই প্রথম শুরু করেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির শিলালিপি বিষয়ক প্রকাশিতব্য গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, অন্যতম সম্পাদক মওলানা ফতেহপুরী এবং অন্য সম্পাদকরা মিলে ইতোমধ্যেই ঢাকার প্রাচীন শিলালিপিসমূহের পাঠ, উচ্চারণ ও অনুবাদ সম্পাদনার কাজ সমাপ্ত করেছেন।
মওলানা ফতেহপুরী বিভিন্ন ভাষায় সৃজনশীল ও মননশীল গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'বিন্দুবিহীন বর্ণে মহানবী (সা.)' 'বিন্দুবিহীন বর্ণে বাংলাদেশ', 'কুন্তু লা আদরী' (উর্দু ভাষায় লেখা গল্পগ্রন্থ)। এছাড়া অনুবাদ করেছেন শেখ সাদির কাব্য 'কারিমা' ও সূফী কবিতার সংকলন 'জজবায়ে মারেফত'।
তিনি ১৯৪৮ সালে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তারপুর ইউনিয়নের পোটন (ফতেহ্পুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে পড়াশোনা করেন মইশাইর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর গ্রামের মেহতাহুল মাদ্রাসা ও বড় কাটরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। তার পরিকল্পনা ছিল ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে উচ্চতর পড়াশোনা করা। কিন্ত ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে তিনি তা করতে পারেননি। ১৯৬৬ সালে তিনি করাচীর জামেয়া ইসলামিয়ায় হাদিস বিষয়ে এবং ১৯৬৭ সালে লাহোরের জামেয়া আশরাফিয়ায় হাদিস ও এলমে ক্বেরাত বিয়য়ে পড়াশোনা করেন।
মওলানা ফতেহ্পুরী বড় কাটরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন, ছাত্রজীবন শেষে দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেন বড় কাটরা মাদ্রাসায়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন মুঘল স্থাপত্য বড় কাটরা থেকেই।
আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় মওলানা ফতেহপুরীর নামাজে জানাজা তার নিজ বাড়িতে এবং বাদ জোহর লালবাগ বড়ভাট মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
Comments