মানুষ কেন বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে নববর্ষ উদযাপন করে

বিশ্বে বিভিন্ন দিবস আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশের মানুষও একইভাবে দিবসগুলো উদযাপন করতে চায়। কিন্তু সাধারণত বড় উৎসবের সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আসে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে উৎসব আয়োজনের জন্য নিরাপদ স্থান ঠিক করে দেওয়া হয়।

আমাদের দেশে এমন উদযাপনের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান ঠিক করে দেওয়া হয় না। বরং এসব উদযাপন যাতে না করা হয়, কিংবা আয়োজন যেন ছোট পরিসরে বা কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়, তার জন্য নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের সঙ্গে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশকে অবশ্যই কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে। কিন্তু তারা যেভাবে ঢালাওভাবে বিধি-নিষেধ আরোপ করে, তা ঠিক না। মানুষকে আনন্দ করার সুযোগ দিতে হবে। নিরাপদে কীভাবে সবাই আনন্দ উপভোগ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। বন্দুকের ভয় দেখিয়ে কারো আনন্দ নষ্ট করা উচিত না। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষ আনন্দ-বিনোদনের জন্য নিরাপদ জায়গা পায় না। তাদেরকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়।'

এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, 'আমাদের দেশে এখন যে আইন প্রচলিত আছে, তা ব্রিটিশ আমলের আইন। এই আইন মূলত শোষণের জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মূলত সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের জন্য এই আইন উপযোগী না। সে জন্য আইনের প্রয়োগের প্রতি সাধারণ মানুষের আর আস্থা নেই।'

তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে পুলিশকে শুধু হাতানো শেখানো হয়েছে। কীভাবে কোনো কিছু প্রতিরোধ করতে হবে, তা শেখানো হয়নি। দেশের পুলিশ কাজ করছে শোষণ-শাসনকে টিকিয়ে রাখার জন্য, ধনীদের টিকিয়ে রাখার জন্য, বড় বড় দুর্বৃত্তদের টিকিয়ে রাখার জন্য।'

'দেশে আইনের যেভাবে প্রয়োগ চলছে, তা চলতে পারে না। ন্যায়বিচার থাকলে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতো। এভাবে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পুলিশকে কিছু করতে হতো না। কিন্তু "ন্যায়" শব্দটি শুধু বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা আছে। বাস্তবে নেই,' তিনি যোগ করেন।

পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, 'পুলিশে পূর্বের কিছু বাজে অভিজ্ঞতা আছে। এ কারণেই বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। মানুষের আচরণ যাতে শৃঙ্খলার মধ্যে আসে, সেজন্য পুলিশ এই ধরনের উদ্যোগ নেয়। এগুলো জনস্বার্থে করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ না থাকলে অনেক সমস্যা হতো।'

তিনি বলেন, 'যেসব বাঙালি সংস্কৃতি না, অপসংস্কৃতি, আপনি যদি বাঙালি সংস্কৃতি বাদ দিয়ে অপসংস্কৃতির চর্চা করেন, সেটা তো ঠিক না। সেখানে দুর্ঘটনা হয়, বিভিন্ন সমস্যা হয়। এই অপসংস্কৃতি অনেক মানুষ পছন্দ করে না।'

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন নিরাপত্তা না দিয়ে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, যেমন: পহেলা বৈশাখ, সেখানে কিন্তু নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কিন্তু ইংরেজি নববর্ষ কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতি না। যার জন্য এই বিষয়ে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আছে।'

পহেলা বৈশাখের সময়ে দেওয়া বিধি-নিষেধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গোটা শহর জুড়েই তো অনুষ্ঠান হয়। সেখানে যদি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের কিছু বিধি-নিষেধ না থাকে, তাহলে তো সমস্যা হবে। জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এমনটা করা হয়।'

'পুলিশ বিধি-নিষেধ আরোপ করলেও যে মানুষ উদযাপন করছে না, বিষয়টা কিন্তু এমন না। তারা বাসার ছাদে, বারান্দায় ঠিকই উদযাপন করছে। কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল থেকে শুরু করে সবজায়গায় উদযাপন হয়,' তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

HC issues rule for curbing air pollution in Dhaka

The HC bench of Justice Kazi Zinat Hoque and Justice Aynun Nahar Siddiqua issued the rule after hearing a writ petition

1h ago