পেটেন্ট ও ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টিতে স্কোরশূন্য বাংলাদেশ
বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে চলতি বছর বাংলাদেশ ১৪ ধাপ এগিয়ে ১৩২টি দেশের মধ্যে ১০২তম অবস্থানে থাকলেও পেটেন্ট ও ইউটিলিটি মডেল এবং ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য।
জেনেভাভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) প্রতিবছর এই সূচক প্রকাশ করে থাকে।
ডব্লিউআইপিওর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক উদ্ভাবন বিবেচনায় নিয়ে এই সূচক তৈরি করা হয়। সূচক থেকে নলেজ ক্যাপিটাল, স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কোন দেশ কতটা এগিয়ে আছে তা জানা যায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পেটেন্ট ও ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টিতে ভারতের স্কোর যথাক্রমে ২ দশমিক ৬ (র্যাংকিং ২৮) ও শূন্য দশমিক ২ (র্যাংকিং ৪৬)। এই দুই ক্ষেত্রে পাকিস্তানের স্কোর যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৩ (র্যাংকিং ৮৭) ও শূন্য (র্যাংকিং ৯১)। পেটেন্টের ক্ষেত্রে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার স্কোর যথাক্রমে শূন্য দশমিক ২ (র্যাংকিং ৯৯) ও ১ দশমিক ২ (র্যাংকিং ৬০)। ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টিতে শ্রীলঙ্কার ও নেপালের কোনো স্কোর উল্লেখ করা হয়নি। ভুটান ও মালদ্বীপ এই তালিকায় নেই।
আর উদ্ভাবন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৪০তম, শ্রীলঙ্কা ৮৫তম, পাকিস্তান ৮৭তম, নেপাল ১১১তম এবং মিয়ানমার ১১৬তম অবস্থানে আছে।
চলতি বছরের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ৬৪ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড। ৬১ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ৬১ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সুইডেন। এ বছরের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৭, যা গত বছর ছিল ২০ দশমিক ২।
ডব্লিউআইপিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ১২.৭ পয়েন্ট পেয়ে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৫তম।
এ ছাড়া জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ৭.১ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০তম, যেখানে পেটেন্ট ও ইউটিলিটি মডেল তৈরিতে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য। তবে সায়েন্টিফিক ও টেকনিক্যাল আর্টিকেল লেখার দিক দিয়ে ৬.৬ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫তম এবং সাইটেবল ডকুমেন্ট (এইচ) সূচকে ১২.২ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৩তম।
নলেজ ইমপ্যাক্ট সূচকে ২২.৯ পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৮তম। যেখানে শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এ ছাড়া নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২২তম, সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৭৫তম, আইএসও ৯০০১ কোয়ালিটি সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে ১১৭তম ও হাইটেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে ৯৭তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
জ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রে ৮.২ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০তম। যেখানে ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টির ক্ষেত্রে স্কোর শূন্য এবং তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯৪তম। পাশাপাশি উৎপাদন ও রপ্তানি জটিলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম, হাইটেক এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে ১০৪তম এবং আইসিটি সার্ভিস এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে ৮৮তম অবস্থানে রয়েছে।
এ ছাড়া সূচক অনুযায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিবেচনায় বাংলাদেশ ৪৪.১ পয়েন্ট পেয়ে ১০৯তম অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায় ৪৫.৫ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। সেখানে বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ১ নম্বরে থাকা সুইজারল্যান্ডের অবস্থান ৬ নম্বর।
রাজনৈতিক পরিবেশের আওতায় আছে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারের কার্যকারিতার বিষয়টি।
এ ছাড়া নিয়ন্ত্রকমূলক পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২২তম, তবে ব্যবসার পরিবেশ বিবেচনায় ৬৯তম।
মানবসম্পদ ও গবেষণায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম এবং প্রাপ্ত স্কোর ১০.৮ পয়েন্ট। যেখানে শিক্ষা খাতে ১৮.৮ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। এর মধ্যে শিক্ষাখাতে ব্যয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম এবং সরকারি ব্যয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩তম।
উচ্চ শিক্ষায় ৯.৩ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০তম এবং গবেষণা ও উন্নয়নে ৪.৪ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৪তম।
অবকাঠামোগত দিক দিয়ে ৩৫.৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশর অবস্থান ৯৪তম। অবকাঠামোগত বিষয়ের মধ্যে আছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ও সেগুলোর ব্যবহার, সরকারের অনলাইন সুবিধা এবং ই-পার্টিসিপেশন।
এ ছাড়া বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৫.৪ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩২টি দেশের মধ্যে ৯২তম। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ক্রেডিট, ইনভেস্টমেন্ট, বাণিজ্য ও বাজার পরিস্থিতি।
বিজনেস সফিস্টিকেশন সূচকে ১৬.৫ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। যেখানে কর্মীদের দক্ষতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭তম, শিক্ষিত নারী কর্মী নিয়োগে ১১১তম।
উদ্ভাবনী কাজে সংযুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম এবং পেটেন্টের ক্ষেত্রে কোনো স্কোর না থাকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম।
জ্ঞানার্জনের দিক দিয়ে ১৮.৭ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম। যেখানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০২তম, হাই-টেক ইমপোর্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৮তম, আইসিটি সেবা আমদানিতে ১২৯তম। তবে বিজনেস রিসার্চ ট্যালেন্টের বিষয়ে কোনো স্কোর না থাকায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অবস্থান নেই।
এ ছাড়া সৃজনশীল কাজে বাংলাদেশ ১৩.০ পয়েন্ট নিয়ে ৮৭তম অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি সৃজনশীল পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪তম এবং অনলাইন ক্রিয়েটিভিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩তম।
বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এ বছর র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করেছে, বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ আউটপুট, ইনট্যাঞ্জিবল অ্যাসেট এবং অনলাইন সৃজনশীলতায়। সবচেয়ে ভালো করেছে করপোরেট ইনট্যাঞ্জিবল অ্যাসেট ইনটেনসিটিতে।
Comments