সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ

তৃষ্ণার শেষ মুহূর্তের গোলে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের রুদ্ধশ্বাস জয়

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ খেই হারিয়ে ফেলল দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতা টেনে নেপাল তৈরি করল পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার সম্ভাবনা। তবে ম্যাচের একদম শেষ কিকে সেই আশায় জল ঢেলে দিলেন তৃষ্ণা রানী সরকার। তার লক্ষ্যভেদে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল পিটার বাটলারের শিষ্যরা।

রোববার ঢাকার কিংস অ্যারেনায় রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে নেপালকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন বদলি স্ট্রাইকার তৃষ্ণা। ঘড়ির কাটা অনুসারে জমজমাট ও ঘটনাবহুল ম্যাচটির বয়স তখন ১১১ মিনিট পেরিয়ে গেছে!

বাংলাদেশের অন্য দুই গোলদাতা হলেন সিনহা জাহান শিখা ও মোসাম্মৎ সাগরিকা। নেপালের পক্ষে জাল খুঁজে নেন আনিশা রাই ও মিনা দেউবা। দুই দলের কেউই অবশ্য পুরো ১১ জন নিয়ে খেলা শেষ করতে পারেনি। মারামারিতে জড়িয়ে ৫৬তম মিনিটে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন বাংলাদেশের সাগরিকা ও নেপালের সিমরান রাই।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে শিরোপাপ্রত্যাশী বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে তাদের অর্জন পূর্ণ ৬ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পাওয়া নেপালের অবস্থান দুইয়ে। ভুটানের পয়েন্ট একই হলেও গোল পার্থক্যে পিছিয়ে তারা রয়েছে তিনে। তলানিতে থাকা শ্রীলঙ্কা দুই ম্যাচ খেলে এখনও পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি।

শুরু থেকে আক্রমণাত্মক রূপে থাকা বাংলাদেশ লিড আদায় করে নেয় ১৪তম মিনিটে। বামপ্রান্ত থেকে সাগরিকার পাস পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দুজনকে কাটিয়ে শট নেন মুনকি আক্তার। নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে ফাঁকি দিয়ে বল জালের দিকেই যাচ্ছিল। গোললাইন থেকে তা ক্লিয়ার করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি গঙ্গা রোকিয়াইয়া। এরপর ডানদিকে ফাঁকায় থাকা শিখা নিশানা ভেদ করেন।

২৮তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় স্বাগতিকরা। আনিশার ফ্রি-কিক বাধা পায় ক্রসবারে। আট মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে মেয়েরা। বামপ্রান্ত থেকে শান্তি মার্ডির গোলমুখে ফেলা বিপজ্জনক ক্রসে শট নেন শিখা। বল তামাংয়ের গায়ে লেগে ফিরে আসে। শিখার ফিরতি শট নেপালের গোলরক্ষকের গায়ে লেগে চলে যায় আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সাগরিকার কাছে। অনায়াসে বল জালে পাঠান তিনি।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

৫৫তম মিনিটে সাগরিকাকে ফাউলের পর চুল টেনে ধরেন সিমরান। এতে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছড়ায় উত্তেজনা। সাগরিকা পরে মায়া মাস্কের মুখে আঘাত করেন। ফল হিসেবে দুটি লাল কার্ড দেখান রেফারি। সাগরিকা ও সিমরানকে হারিয়ে ১০ জনে পরিণত হয় দুই দল।

এরপর শুরু হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের পথ হারানো। ৭৫তম মিনিটে ডি-বক্সে মিনাকে পেছন থেকে জয়নব বিবি ফাউল করলে পেনাল্টি পায় নেপাল। স্পট-কিক থেকে গড়ানো শটে জাল কাঁপিয়ে ব্যবধান কমান আনিশা। ৮৬তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-২ হয়ে যায়। বামপ্রান্ত থেকে পূর্ণিমা রাইয়ের ক্রসে আলতো টোকায় বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রানীকে পরাস্ত করেন মিনা।

হতাশা ভুলে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে জয়সূচক গোলের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দারুণ একটি আক্রমণের সফল সমাপ্তি টানেন তৃষ্ণা। ডানপ্রান্ত থেকে উমেহলা মারমার ক্রসে ডি-বক্সের ভেতরে ডান পায়ের নিখুঁত টোকায় গোল করে দলকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতান তিনি।

Comments