‘সব দেশের মিশনের প্রত্যাশা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে’

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। ছবি: সংগৃহীত

'শুধু আমি না, বাংলাদেশে সব সমমনা দেশের মিশনের প্রত্যাশা এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। আমি যে দায়িত্ব নিয়ে এ দেশে এসেছি, তা নিয়েই সবার সঙ্গে কথা বলছি। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় আগামী নির্বাচন ভালো হবে বলে আমি আশা করি।'

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে 'আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি' প্রসঙ্গে নিজের মন্তব্য বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

বাংলাদেশ ও জাপানের সম্পর্কেকে কৌশলগত স্তর নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, '২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে একটি ব্যাপক অংশীদারিত্ব চালু করেছিলেন। তারপর থেকে ২ দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে এবং বাংলাদেশে জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা আগের ১০ বছরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।'

তিনি আরও বলেন, 'এ অঞ্চলে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ ও মুক্ত বাণিজ্যের উদ্যোগ নিয়েছে এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। স্পষ্টতই, বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া, পরিবর্তিত কৌশলগত ল্যান্ডস্কেপে নিরাপত্তা বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আমি মনে করি এটি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে নতুন কিছু হবে।'

নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের আত্মরক্ষামূলক অফিসার, যৌথ প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক বিষয়ে কাজ করতে হবে। গত জানুয়ারিতে দুটি জাপানি জাহাজ চট্টগ্রামে পোর্ট কল দিয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোবাইল রাডার সিস্টেম সংগ্রহে আগ্রহ দেখিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে একাধিক উত্স রাখতে হবে। কাজেই আমরা আমাদের অংশীদারিত্বকে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে পারলে, ২ দেশের মধ্যে এই নতুন ধরনের সহযোগিতা পেতে পারি। এ ছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা ও আইসিটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জাপান ও বাংলাদেশ সহযোগিতার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।'

জাপান তাদের 'ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি)' কৌশলে বাংলাদেশকে কীভাবে যুক্ত করতে চায় তা জানতে চাইলে ইতো নাওকি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশকে এফওআইপিতে জাপানের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি।'

তিনি বলেন, 'যদি কোনো দেশ আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করে, তাহলে সে বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে এবং এর বিরোধিতা করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকের কথা বলেছে। আমরাও একই ধারণা পোষণ করি।'

মিয়ানমারে সামরিক শাসন ও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ইতো নাওকি বলেন, 'আমরা মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে বার্তা পাঠিয়েছি যে তাদের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং বন্দিদের মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার করতে হবে। এগুলো পরিস্থিতি উন্নয়নে অপরিহার্য।'

তিনি আরও বলেন, 'রোহিঙ্গারা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাই। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে পরিবেশ তৈরি করা প্রথম কাজ হতে হবে। আমরা মিয়ানমারে যেভাবে বার্তা পাঠিয়েছি, তা এই লক্ষ্যে সহায়ক হবে বলে আশা করছি।'

বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, 'যতদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে, আমরা চাই তাদের অবস্থার উন্নতি হোক। উপযুক্ত সময় হলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাদের প্রয়োজন শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও জীবিকার সুযোগ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং বাংলাদেশকে এর জন্য একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, জাপান রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা প্রদানে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং আশা করি অন্যরাও তা করবে।'

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সংকটের মুখে। এ ক্ষেত্রে জাপান কীভাবে সহায়তা করতে পারে?  এ প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, 'প্রতিটি দেশ এই যুদ্ধের কারণে প্রভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ঋণের জন্য আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বাজেট সহায়তা হিসেবে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে বাংলাদেশ জাপানকে অনুরোধ করেছে। ২০২০ সালে এবং গত বছরও জাপান এই ধরনের সহায়তা দিয়েছে। এই বছরও বাংলাদেশের অনুরোধ আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। কিন্তু এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।'

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর স্থগিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এই সফর আমাদের বন্ধুত্বকে আরও গভীর করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার বিকাশের জন্য এখনও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করছি সফরটি শিগগির হবে এবং আমাদের অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেবে।'

জাপান বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ঋণ দিয়েছে দেশটি। জাপান বর্তমানে কিছু বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে।

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

48m ago