ছুটি না দিয়ে নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ সহকারী সচিবের

অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে ছুটির আবেদন করেছিলেন ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ইউরোলজি বিভাগের (বর্তমানে ওএসডি) অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাস। কিন্তু, ছুটি না দিয়ে তাকে দেশেই একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে বলেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুজিৎ দেবনাথের সই করা ওই সার্কুলারটি গতকাল দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া সেই সার্কুলারে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাস 'টিনিটাস ডিউ টু আননোন অ্যাটিওলজি' নামক কানের রোগে ভুগছেন। কানের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে তিনি ১৬ সেপ্টেম্বর অথবা ছুটিভোগের তারিখ থেকে মোট ১৫ দিন বহিঃবাংলাদেশ অর্জিত ছুটির আবেদন করেছেন। 'এই অবস্থায় অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাসকে উপমহাদেশের প্রখ্যাত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের পরামর্শ নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।'

সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাস বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পাওনা ছুটির আবেদন করেছেন, যাতে উন্নত চিকিৎসা নিতে ভারতে যেতে পারেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া গতকালেরই সার্কুলারে আরেক চিকিৎসককে (ওএসডি) ভারতে যাওয়ার জন্য ৭ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। সেই চিকিৎসকের মেয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন। মেয়ের সঙ্গে যাওয়ার জন্য তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আরও এক চিকিৎসককে ভারতে চিকিৎসার জন্য ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এক নারী চিকিৎসকের স্বামী ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন। স্বামীর সঙ্গে যাওয়ার জন্য তাকেও ১৫ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

অসুস্থ একজন অধ্যাপককে ছুটি না দিয়ে অন্য একজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাস দেশের চিকিৎসকদের দেখিয়ে তার পরেই ভারতে যেতে ছুটির আবেদন করেছেন। ছুটির জন্য নিশ্চয়ই তিনি এখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এরপরেও মন্ত্রণালয় কী করে তাকে আরেকজন চিকিৎসকের কাছে রেফার করে? মন্ত্রণালয় যা করেছে, তা হাস্যকর। এটার মাধ্যমে তাকে অপমান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব এভাবে বলে দিতে পারেন না যে, একজন অসুস্থ মানুষ কোন চিকিৎসকের কাছে যাবে। এখন মন্ত্রণালয় যদি রেফার করার দায়িত্ব নেয়, তাহলে শুধু চিকিৎসা করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের নেওয়াটা বাকি থাকে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা যেহেতু চিকিৎসার বিষয়, মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাসকে ছুটি দেওয়া যেত। হাজারো মানুষ ভারতে যাচ্ছেন। তারা যেতে পারলে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তারও যেতে পারার অধিকার আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার অধিকার তার আছে। এখন তাকে যদি যেতে না দেওয়া হয়, তাহলে তো একটা দ্বৈত নীতি হয়ে গেল। কিছু লোক বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে, অথচ তাকে দেওয়া হলো না। এতে তার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।'

'অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাস নিজেই তো একজন চিকিৎসক। তিনি ছুটির আবেদন করেছেন। তাকে ছুটি দেওয়া হবে, নয়তো হবে না। কিন্তু, তাকে আরেকজন চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার কথা বলাটা ঠিক হয়নি। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন', যোগ করেন তিনি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একজন কর্মকর্তাকে ছুটি দেওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। সেই সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নিতে পারে। কিন্তু, তিনি কার কাছে চিকিৎসা নেবে, সেটা তার ব্যাপার। সেটা কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দিতে বা বলতে পারে না। ছুটি না দেওয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের আছে। কিন্তু, তারা নির্দিষ্ট করে বলতে পারের না যে কার কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। সিনিয়র সহকারী সচিব যে সার্কুলারটা দিয়েছেন, সেটা এখতিয়ার বহির্ভূত হয়েছে।'

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অধ্যাপক ডা. মৃন্ময় বিশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুজিৎ দেবনাথকে ফোন করলে তিনি কেটে দেন। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি। এরপর আরও ৩ বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago