তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু

‘এই এক সেতুর লাইগা ৩০ বছর অপেক্ষা করছি’

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জের বাসিন্দা বজলুর রহমান। পেশায় রাজমিস্ত্রি। বন্দরে তেমন কাজ পান না। কাজের খোঁজে যেতে হয় সদরে। সদর ও বন্দরের মাঝে শীতলক্ষ্যা নদী। এতদিন এই নদী পার হতেন ট্রলার কিংবা নৌকায়। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর আজ সোমবার নদী পার হলেন হেঁটে।
১২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ উদ্বোধন করা হয়েছে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জের বাসিন্দা বজলুর রহমান। পেশায় রাজমিস্ত্রি। বন্দরে তেমন কাজ পান না। কাজের খোঁজে যেতে হয় সদরে। সদর ও বন্দরের মাঝে শীতলক্ষ্যা নদী। এতদিন এই নদী পার হতেন ট্রলার কিংবা নৌকায়। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর আজ সোমবার নদী পার হলেন হেঁটে।

বজলুর রহমান বলেন, 'সেতুটা হওনে খুব উপকার হইছে। এই এক সেতুর লাইগা ৩০ বছর অপেক্ষা করছি। অমুকে করব, তমুকে করব কইতে কইতে আর সেতু হয় নাই। আগে নৌকা দিয়া পার হওনে ট্যাকা লাগতো। এহোন তাও লাগতো না। কামলা মানুষ হাঁইটাই যাইতে পারমু।'

একই কথা বলেন বজলুর রহমানের সঙ্গে থাকা আলী নূর ও ইকবাল হোসেন। আলী নূর বলেন, 'এই সেতুটা হওনের অপেক্ষায় ছিলাম। এক বছর পর বন্দরের চেহারাও পাল্টাইয়া যাইব। যোগাযোগ বাড়ব, মিল-কারখানা বাড়ব। কামের লাইগা এইপারের (বন্দর) মানুষগো হেইপার যাওন লাগতো না।'

২০১০ সালের নভেম্বরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সদরের সৈয়দপুর থেকে বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ১২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর উদ্বোধন করা হয়েছে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। সোমবার দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেতুটি পেয়ে উচ্ছ্বসিত ২ পারের মানুষ।

রাত ১২টার পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের। তবে দুপুরে সেতুটি উদ্বোধন পর থেকেই ২ পাড়ে মানুষের ঢল নামে। দুপুরেই কিছু মোটরসাইকেল, ট্রাক ও প্রাইভেটকার সেতুটিতে চলতে দেখা গেছে। অনেকেই সেতুটিতে ঘুরতে আসেন।

স্কুলড্রেস পরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও ঘুরতে দেখা যায় সেতুটিতে। স্কুলশিক্ষার্থী উর্মি আক্তার হাবিবা বলেন, 'আমাদের স্কুল পাশেই। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। সেতু উদ্বোধন হয়েছে জেনে আমরা কয়েকজন ঘুরতে আসছি।'

১ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতুর ৪ লেনে চলবে দ্রুতগতির যানবাহন। ২ পাশে হাঁটার জন্য ফুটপাত ছাড়াও দ২টি লেন রাখা হয়েছে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য। ধীরগতির যান চলাচল ব্যবস্থা রাখায় সহজে সেতুটি পার হওয়া যাবে বলছেন স্থানীয়রা।

সদর উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, 'আমার শ্বশুরবাড়ি বন্দরের কলাছিয়ায়। বেড়াতে যাওয়ার সময় বউ-বাচ্চা নিয়া ট্রলার দিয়া ঝুঁকি নিয়া নদী পারাপার হতে হতো। এখন আর সেই ঝামেলা নাই। গাড়ি তো চলবই, হাঁটার রাস্তাও রাখছে। হাঁইটাও পার হওয়া যাইব। অন্তত ট্রলার ডোবার ভয় থাকব না।'

প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, 'এটি একটি জাতীয় সেতু। স্থানীয়দের সুবিধার চেয়ে এটি জাতীয়ভাবে বেশি ভূমিকা রাখবে। সময় ও দূরত্ব উভয়ই সাশ্রয় করবে শীতলক্ষ্যার ওপর নির্মিত সেতুটি।'

৬০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণে ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে সৌদি সরকার। বাকি অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সেতু নির্মাণ করেছে  চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড'। ইতোমধ্যে সেতু চলাচল করা যানবাহনের টোল নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা সড়ক বিভাগ। রাত থেকেই টোল আদায় শুরু হবে। টোল আদায়ের জন্য সেতুর পূর্ব পাশে ছয়টি পৃথক লেন রাখা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago